অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশ এখন নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের পথে যাত্রা করা দক্ষিণ এশিয়ার একটি উদীয়মান অর্থনীতি। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, ভৌগোলিক সুবিধা ও ভোক্তা বাজারের প্রাচুর্য মিলিয়ে বিনিয়োগের জন্য দেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু বাস্তবতায় এসে সেই সম্ভাবনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধিক কাঠামোগত ও প্রশাসনিক সংকট।
দেশে ব্যবসা শুরু করতে গেলে উদ্যোক্তাদের পড়তে হয় অনুমোদনের জন্য নানা দপ্তরের দ্বারে দ্বারে। ঘুষ, অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতা এই প্রক্রিয়াকে করে তুলেছে কষ্টসাধ্য। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BIDA) ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কার্যকারিতা এখনও সীমিত। প্রশাসনিক সেবা পেতে উদ্যোক্তাদের ভরসা করতে হয় দালাল চক্রের ওপর, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত হানে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি, শিল্পাঞ্চলে উপযুক্ত জমির অভাব এবং দুর্বল সড়ক ও বন্দর ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। একটি কারখানা চালু রাখতে যেখানে প্রতিযোগী দেশগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়, সেখানে আমাদের ব্যবসায়ীরা নির্ভর করে বিকল্প জেনারেটরের ওপর।
বিনিয়োগকারীরা চান স্থায়ী ও পূর্বানুমানযোগ্য নীতি। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক সময় করনীতি, আমদানি নীতি কিংবা বিনিয়োগ সহায়তা হঠাৎ পরিবর্তন হয়, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রাজনৈতিক অস্থিরতাও সময়বিশেষে বিনিয়োগ পরিবেশকে করে তোলে অনিরাপদ।
দেশের আর্থিক খাতেও আছে সংকট। খেলাপি ঋণের বোঝা, উচ্চ সুদের হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি বড় বিনিয়োগে অর্থায়নকে করে তোলে কঠিন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ পাঠাতে কিংবা কাঁচামাল আমদানিতে মুখোমুখি হন ডলার সংকটের, যা তাদের আস্থা আরও কমিয়ে দেয়।
২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) প্রবাহ ৭০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে প্রতিবেশী ভিয়েতনাম, ভারত বা ইন্দোনেশিয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর পেছনে মূল কারণ হলো—ব্যবসার পরিবেশে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হওয়া।
এখন প্রয়োজন সুশাসন ও দুর্নীতি রোধ – প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এ তিনটি কৌশলগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ সম্পর্কিত নীতিমালায় স্থায়িত্ব ও পূর্বানুমেয়তা জরুরি। এছাড়া শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাস্তাঘাট, জমি এবং দক্ষ শ্রমশক্তির প্রাপ্যতা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশকে যদি সত্যিকারের বিনিয়োগবান্ধব দেশে পরিণত করতে হয়, তাহলে কেবল সম্ভাবনার গল্প নয়—নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। আজই যদি আমরা এই কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সাহসী সিদ্ধান্ত না নিই, তাহলে কালকের সম্ভাবনা হয়ে উঠবে আজকের আফসোস। বিনিয়োগ মানেই কর্মসংস্থান, রফতানি, প্রযুক্তি আর প্রবৃদ্ধি—যার মাধ্যমেই গঠিত হয় একটি টেকসই অর্থনীতি। ●
অকা/প্র/সকাল/ ৭ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 6 days আগে