তারেক আবেদীন ●
তৃতীয় প্রজন্মের নন লাইফ বীমা কোম্পানি রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর গাড়িচালক খন্দকার সোহেল রানাকে ভিপি পদে অবৈধভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তা করা হয়েছে কোম্পানির চাকরি বিধি (সার্ভিস রুল) সম্পূর্ণ অমান্য করে। যে অনুমোদিত চাকরি বিধিতে স্বাক্ষর করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরীও। তখন তিনি ছিলেন কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির চেয়ারম্যান ৪ মাস ধরে তিনি অফিসে আসেন না। ভ্যাচুয়ালিতে তিনি কোম্পানির কার্যক্রমে অংশ নেন। জানা গেছে, কোম্পানির চাকরি বিধি অনুয়ায়ী ভিপি পদে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার তা খন্দকার সোহেল রানার নেই। যে সনদে তার নিয়োগের নির্ভরতা তা আসল নয় বলে অভিযোগ রয়েছে! এ পদোন্নতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ কোম্পানির ভেতর ও বাহিরে। কোম্পানির প্রধান ও প্রিন্সিপাল অফিসের বঞ্চিত কর্মকর্তারা ভয়ে মুখ খুলছে না।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কোম্পানির বিপনন বিভাগের মালিবাগ শাখায় কর্মরত খন্দকার সোহেল রানাকে গত ২৬ মে পদোন্নতি দেয়া হয়। নিয়োগ পত্রে (আরআইসিএল/এইচও/অ্যাপয়েন্টমেন্ট/২০২৪/০৫/৩৫৫০) খন্দকার সোহেল রানার মাসিক বেতন নির্ধারিত হয়েছে ৬৬ হাজার ৯৯৭ টাকা। ভ্যাট ও স্ট্যাম্পসহ বার্ষিক ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানির মানব সম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নুমান আবেদিন নিয়োগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
জানা গেছে, কোম্পানির চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরী পরিচালক থাকাকালে খন্দকার সোহেল রানা তাঁর গাড়িচালক ছিলেন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকার বাইরে যাত্রায় হানিফ চৌধুরী ও তাঁর পারিবারিক সদস্যদের গাড়ি চালিয়ে আনা নেওয়া করতেন গাড়িচালক খন্দকার সোহেল রানা। সে সুবাদে কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরী এবং তাঁর পরিবারের সকলের সঙ্গে গাড়িচালক খন্দকার সোহেল রানার সখ্যতা গড়ে ওঠে। চৌধুরী পরিবারে গৃহস্থালীর কাজও করতেন এ গাড়িচালক। সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় খন্দকার সোহেল রানার যোগ্যতা থাক বা না থাক তা এড়িয়ে কয়েক মাস আগে তাকে পুরস্কৃত করেন চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরী। প্রভাব খাটিয়ে হানিফ চৌধুরী তাকে গাড়িচালক পদ থেকে অব্যাহতির কাজটি করান বড় পদে পুরস্কৃত করার জন্য। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী বিশ্বস্ত গাড়িচালক খন্দকার সোহেল রানাকে সরাসরি ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে নিয়োগ দেয় কোম্পানি। কোম্পানির যোগ্য ও প্রকৃত শিক্ষিত কর্মকর্তা কেউ এ পদোন্নতিকে ভালো চোখে দেখছেন না। চাকরিতে সমস্যা হতে পারে তা ভেবে অনেকেই কথা বলতে চান না।
জানা গেছে, কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার শিক্ষা সনদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোম্পানির প্রিন্সিপাল শাখার দায়িত্বরত সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) রোমেন আহাম্মদের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি অর্থকাগজকে বলেন, শিক্ষা সনদ আসল না নকল তা তদন্ত করে দেখুন। খন্দকার সোহেল রানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিষয়েই শুধু কথা বলুন। আপনাদের দুজন কর্মকর্তার শিক্ষা সনদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমি নামাজ পড়েছি। একটি জানাজায় যাব আর কথা বলতে পারছি না।
কোম্পানির বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক (এসিট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট) মেহেদী হাসানের সঙ্গে প্রথমে স্থানীয় ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ১৮ বছর ধরে রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স বগুড়া শাখায় আছি, আগে ছিলাম প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সে। এখানে ব্যবসা মোটামুটি ভালোই করছি। খন্দকার সোহেল রানার বিষয়টি তুলে ধরা হয় তার কাছে। পরিচয় জানতে পেরে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ মেহেদী হাসান কিছুটা চুপসে যান! পরে মেহেদী বলেন, তিনি (খন্দকার সোহেল রানা) গাড়িচালক ছিলেন তা শোনা কথা। তবে চেয়ারম্যান স্যারের কাছের লোক তিনি।
কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. একেএম সরোয়ার জাহান জামিলের কাছে খন্দকার সোহেল রানার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অর্থকাগজ এর কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখার দরকার হয় না; ব্যবসা বড় কথা!
বিয়য়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে খন্দকার সোহেল রানার সেলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কোম্পানির মালিবাগ শাখায় যোগাযোগ করা হয়। সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, মালিবাগ শাখায় খাতা কলমে দায়িত্বে আছেন খন্দকার সোহেল রানার স্ত্রী রুমা আক্তার, যার পদবী সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকে খুব একটা কোম্পানির মালিবাগ শাখার অফিসে দেখা যায় না। অনেকেই বলছেন তিনি ডামি কর্মকর্তা! এ রকম ডামি কর্মকর্তা রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এ আরও রয়েছে বলে অভিযোগ আছে! বর্তমানে খন্দকার সোহেল রানাই মালিবাগ শাখার মূল কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির সাবেক একজন পদস্থ কর্মকর্তা বীমা কোম্পানিতে গাড়িচালক থেকে সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ ভিপি পদে নিয়োগের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভিপি পদের এ ‘কর্মকর্তা’ কোম্পানির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত হবেন এক সময়! তখন শিক্ষিত সমাজ এটা কি কেউ মেনে নিতে পারবেন? তিনি অর্থকাগজকে জানান, রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর বর্তমান চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরী কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত নিয়মকে নষ্ট করেছেন তাঁর স্বেচ্ছাচার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। হালে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত প্রভাবশালী একটি শিল্প গোষ্ঠী প্রধানের নিকট আত্মীয় বলে ভয়ে চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরী দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বর্তমান প্রধান নির্বাহীও বিতর্কিত এবং চেয়ারম্যানের একতরফা কাজের সহযোগী। আগের কোম্পানিতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কাজ করেছিলেন এই মুখ্য নির্বাহী। ফলে তার চাকরি চলে যায়। আর সে জন্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে মোট অংকের জরিমানা প্রদানের দায় নিতে হয় পূর্বের কোম্পানিকে। বেশ কবছর চেয়ারম্যান ও এমডি যৌথভাবে অবৈধ ও অন্যায্য কার্যক্রমের মাধ্যমে রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। ●
অকা/নলাবী/বিপ্র/ই/দুপুর/৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

