অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। এক বছরের ব্যবধানে নিট রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রোববার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে দেশের নিট রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অর্থাৎ এক বছরে রিজার্ভের এই বড় ধরনের উল্লম্ফন আগে কখনো দেখা যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, চলতি ব্যয় নির্বাহ এবং স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দায় মেটানোর পরও রিজার্ভে এই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ কাজ করেছে। বিশেষ করে অর্থ পাচার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসা এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকায় ডলারের বহিঃপ্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে এবং রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক গতি দেখা গেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় তুলনামূলক কম থাকায় রিজার্ভ দ্রুত বাড়তে সক্ষম হয়েছে।
তবে রিজার্ভের এই শক্ত অবস্থানের মধ্যেও চলতি হিসাবের ভারসাম্যে নতুন করে চাপের ইঙ্গিত মিলছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই–অক্টোবর সময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে। আগস্ট পর্যন্ত যেখানে এই হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল, সেখানে সেপ্টেম্বর থেকে ঘাটতি দেখা দেয়। এই সময়ে রপ্তানি আয় কিছুটা কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়াই ঘাটতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৮ কোটি ডলার। এর বিপরীতে চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর দিনের শুরুতে নিট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এক বছরে নিট রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার। একই সময়ে দেশের গ্রস রিজার্ভও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার থেকে ৩ হাজার ২৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
মাসিক হিসাবেও রিজার্ভ বৃদ্ধির ধারা স্পষ্ট। গত নভেম্বরের শেষ দিনে নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ডলার, যা এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে প্রায় ১৭০–১৮০ কোটি ডলার যোগ হয়েছে।
রিজার্ভের এই শক্ত অবস্থানের প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও। ডলারের বিপরীতে টাকার মান মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের পর টাকার মান কিছুটা শক্তিশালী হলেও ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেছে। এতে একদিকে রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে বিনিময় হারেও বড় ধরনের অস্থিরতা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
সব মিলিয়ে রিজার্ভে রেকর্ড বৃদ্ধির এই ধারা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত দিলেও, চলতি হিসাবে নতুন করে ঘাটতির ইঙ্গিত ভবিষ্যতে বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থাপনায় সতর্কতার প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরছে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে

