অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড (এমএফ) দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রকৃত সম্পদমূল্য বা নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি)-এর তুলনায় অনেক নিচে লেনদেন হচ্ছে। এই প্রবণতা ফান্ডগুলোর দুর্বল পারফরম্যান্স এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার ইঙ্গিত বহন করে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটি সম্প্রতি এক খসড়া সংশোধনী প্রকাশ করেছে, যা কার্যকর হলে শেয়ার বাজারে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এনএভি থেকে ২৫% কমে লেনদেন হলে রূপান্তর বাধ্যতামূলক
খসড়া অনুযায়ী, কোনো ক্লোজড-এন্ড ফান্ডের ইউনিট যদি টানা ছয় মাস ধরে তার এনএভি থেকে ২৫ শতাংশ বা তার বেশি ডিসকাউন্টে লেনদেন হয়, তাহলে সেই ফান্ডকে বাধ্যতামূলকভাবে লিকুইডেশন বা ওপেন-এন্ড ফান্ডে রূপান্তর করতে হবে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সালে মেয়াদ বাড়ানোয় আটকে থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন করে অর্থ ফেরতের সুযোগ তৈরি হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে বিএসইসি জনমত আহ্বান করেছে এবং ভবিষ্যতে নতুন কোনো ক্লোজড-এন্ড ফান্ডের অনুমতি না দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
রূপান্তরের প্রক্রিয়া
খসড়ার বিধান অনুযায়ী, কোনো ফান্ডের ছয় মাসের গড় বাজারদর যদি গড় এনএভি (ন্যায্য বা ক্রয়মূল্যের মধ্যে যেটি বেশি) থেকে ২৫ শতাংশের বেশি নিচে থাকে, তবে গেজেট প্রকাশের ছয় মাস পর তা রূপান্তরের আওতায় আসবে।
সে সময় ট্রাস্টিকে একটি বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করতে হবে এবং সেখানে ইউনিটহোল্ডারদের তিন-চতুর্থাংশ ভোটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএসইসি মুখপাত্র মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বেশিরভাগ ফান্ডের বাজারদর এনএভি থেকে অনেক নিচে, যা তাদের পারফরম্যান্সের দুর্বলতা স্পষ্ট করে। অ-পারফর্মিং ফান্ডগুলো ওপেন-এন্ড কাঠামোয় রূপান্তরিত হলে বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সময় তাদের অর্থ তুলে নিতে পারবেন, যা বাজারে তারল্য বাড়াবে।”
কাস্টোডিয়ানের ভূমিকা ও নতুন শর্ত
প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো (এএমসি) সরাসরি ফান্ডের সম্পদ পরিচালনা করতে পারবে না। পরিবর্তে কাস্টোডিয়ান সংস্থা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে, যাদের ন্যূনতম দুই শ’ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে।
পাশাপাশি কাস্টোডিয়ান ফি ০.১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ০.৫০ শতাংশ পর্যন্ত করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীর স্বার্থে কঠোর বিধান
বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষায় নতুন বিধিমালায় ফান্ডগুলোকে শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত ও সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে বিনিয়োগের কোনো শ্রেণিভিত্তিক সীমা না থাকলেও পুরো প্রক্রিয়া হবে নিয়ন্ত্রিত ও স্বচ্ছ।
বিএসইসি’র এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কিছু ফান্ড ম্যানেজার বিনিয়োগকারীদের অর্থকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে ব্যবহার করেন। এই অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।”
বাজারে ইতিবাচক প্রভাবের আশা
বর্তমানে বাজারে ৩৭টি ক্লোজড-এন্ড ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই তাদের অভিহিত মূল্যের চেয়ে অনেক নিচে লেনদেন হচ্ছে।
বিএসইসি কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, নতুন সংশোধনী কার্যকর হলে এই ফান্ডগুলো ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত লিকুইডেশন বা রূপান্তর প্রক্রিয়ার আওতায় আসবে। এতে বিনিয়োগকারীরা অন্তত তাদের বিনিয়োগের একটি অংশ ফেরত পাওয়ার সুযোগ পাবেন এবং বাজারে আস্থা ফিরবে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 12 hours আগে