অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন শেয়ার বাজারের ক্লোজ-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড খাতে নতুন করে গভীর অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। ১২ নভেম্বর জারি করা সরকারি গেজেট অনুযায়ী, বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৪টি ক্লোজ-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩১টিই এখন অবসায়ন অথবা ওপেন-এন্ড ফান্ডে রূপান্তরের সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির অবস্থায় থাকা এই খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের গড় বাজারদর যদি তার ইস্যু মূল্য বা নিট সম্পদ মূল্যের (এনএভি) তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি কমে যায় এবং সেই অবস্থা টানা ছয় মাস স্থায়ী হয়, তবে সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টিকে ইউনিট হোল্ডারদের নিয়ে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করতে হবে। ওই সভায় ফান্ডটির অবসায়ন, ওপেন-এন্ডে রূপান্তর কিংবা ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন—সবকিছুই আলোচনার টেবিলে আসতে পারবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিএসইসির নির্ধারিত মানদণ্ডের ওপরে অবস্থান করছে মাত্র তিনটি ফান্ড—প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১ এবং রিলায়েন্স ওয়ান। বাকি ৩১টি ফান্ড বর্তমানে এনএভি ও ইস্যু মূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ছাড়ে লেনদেন হচ্ছে, যা নতুন বিধান অনুযায়ী তাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

নতুন নিয়মে ফান্ডের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ইউনিট হোল্ডারদের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে জোরদার করা হয়েছে। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অন্তত ৭৫ শতাংশ ভোটের সমর্থন পেলেই অবসায়ন বা ওপেন-এন্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা চাইলে ফান্ড ম্যানেজার বা ট্রাস্টি পরিবর্তনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, যা আগে তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল।

বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা ন্যায্য রিটার্ন ও ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক ফান্ড তাদের ঘোষিত এনএভির তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কম দামে লেনদেন হচ্ছে, যা সুস্থ বাজার কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আর কোনো ক্লোজ-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন দেওয়া হবে না এবং আন্তর্জাতিক পরিসরেও এই কাঠামো ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাই এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য।

তবে বাজার বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করছেন, উদ্যোগটি দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক হলেও স্বল্পমেয়াদে তা ঝুঁকিমুক্ত নয়। একসঙ্গে বহু ফান্ড অবসায়ন বা রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় গেলে বাজারে বাড়তি বিক্রয়চাপ তৈরি হতে পারে, যা সামগ্রিক সূচক ও বিনিয়োগকারীদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, কেবল কাঠামোগত পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়; একই সঙ্গে নিট সম্পদ মূল্যের স্বচ্ছ ও নির্ভুল হিসাব প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ফান্ডের মেয়াদ শেষ হলে তা বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে সরে এসে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার চর্চা গড়ে তোলা জরুরি। তা না হলে ভালো পারফরম্যান্স থাকা সত্ত্বেও দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার ও তুলনামূলক সুস্থ ফান্ডগুলোও সামগ্রিক দুর্বলতার চাপের মুখে পড়তে পারে।
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে

Leave A Reply

Exit mobile version