অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বোনাস ডিভিডেন্ড অনুমোদনকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। একই ধরনের অডিট আপত্তি ও আর্থিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কোম্পানিকে বোনাস শেয়ার ইস্যুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আবার অন্যদের ক্ষেত্রে আবেদন সরাসরি বাতিল করা হয়েছে। এই ভিন্নমুখী অবস্থান বাজারের অংশীজনদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সবশেষ সিদ্ধান্তে বিএসইসি হিমাদ্রি লিমিটেড এবং কেঅ্যান্ডকিউ (বাংলাদেশ)–এর বোনাস ডিভিডেন্ড প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। হিমাদ্রি ১০০ শতাংশ এবং কেঅ্যান্ডকিউ ৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কমিশনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এসব কোম্পানির পর্যাপ্ত পুঞ্জীভূত মুনাফা নেই এবং ৩০ জুন ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর অডিট আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে স্থায়ী সম্পদের মূল্যায়ন, ভ্যাট জমা সংক্রান্ত অনিয়ম এবং শ্রমিক মুনাফা অংশগ্রহণ তহবিলের হিসাব আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে কেঅ্যান্ডকিউ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ত্রুটিপূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন থাকা কোম্পানিগুলোকে বোনাস ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর কিছু ফাঁকফোকরের কারণে সব ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন কার্যকরভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যদি আগের দুই অর্থবছরে ন্যূনতম ১০ শতাংশ করে নগদ ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে, তাহলে তারা কমিশনের আগাম অনুমতি ছাড়াই বোনাস বা স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস এবং লাভেলো আইসক্রিমের মতো কোম্পানি অডিট আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে।
আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এমন কিছু উদাহরণ, যেখানে অডিট রিপোর্টে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ থাকা সত্ত্বেও কমিশনের কাছ থেকে বোনাস শেয়ার ইস্যুর অনুমতি পেয়েছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, মামুন অ্যাগ্রো এবং কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজের মতো কোম্পানি। বিপরীতে, আছিয়া সি ফুড এবং বিডিকম অনলাইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো একই ধরনের পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—একই মানদণ্ডে বিচার না হলে নিয়ন্ত্রক সিদ্ধান্তের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা থাকে?
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, নিয়ম প্রয়োগে এই দ্বৈততা এবং আইনি শিথিলতা শেয়ার বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের যুক্তি, কমিশন যদি অভিন্ন ও নিরপেক্ষ নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা বাজারে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ধারণাকে দুর্বল করবে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়তে পারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে

