অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রদত্ত তথ্য, অংশীজনের মতামত গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানে সাব্যস্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশে সব ধরনের সুতা আমদানিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত মূল্য অপেক্ষা স্থলবন্দর থেকে সুতা আমদানিতে উল্লেখযোগ্য হারে অবমূল্যায়ন করা হয়। এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশীয় সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই অবমূল্যায়িত মূল্যের সঙ্গে প্রতিযোগী হতে পারছে না। চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতার গড়মূল্য প্রায় সমান। অথচ স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানিকৃত সুতার মূল্য অনেক কম।

দেশীয় সুতাশিল্পের সুরায় স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২৭ মার্চ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাকসুদা খন্দকারের সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

‘ভারতের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করে দ্রুত শিপমেন্ট করার কারণে দেশের অভ্যন্তরে কম দামে প্রবেশের ফলে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা আমদানিকৃত সুতা ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পখাত অপূরণীয় তির মুখে পড়ছে।’ সব স্থলবন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানি বন্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি অথবা বিদ্যমান এসআরও-তে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংশোধনী জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

এর আগে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে এক চিঠিতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানায় সুতাকল ও বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের সই করা ওই চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও (এনবিআর) দেয়া হয়।

সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় সুতা আমদানিতে অধিক হারে শুল্ককর বসানো ও অবৈধভাবে সুতা আমদানি বন্ধের সুপারিশ করে সংগঠনটি।

এনবিআরে দেওয়া চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি উল্লেখ করেন, বিগত সরকার নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু এসব স্থলবন্দরে সুতার মান যাচাই করে শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বা কারিগরি সমতা নেই। শুধু আংশিক আমদানির অনুমোদন দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট শিল্পের পর্যবেকদের মতে, এর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে তিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সুতাকলগুলো।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নতুন অর্থ বছরে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি দেখেছি, অথচ কার্যাদেশ কম পাওয়াসহ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয় মিলগুলো। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প যখন মারাত্মক সংকটে, তখন বাংলাদেশে ভারতের টেক্সটাইল পণ্য রফতানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যা দেশের স্বার্থবিরোধী। স্থানীয় শিল্প ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিরুদ্ধে এ ধরনের নীতি নেয়া হয়, যা অবিশ্বাস্য। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার এটি পরিবর্তন করে স্থানীয় শিল্পকে সুরা দেবে।

‘স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ফলে বিদেশি সুতার ওপর আমদানি-নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে, আমদানি ব্যয় বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে বেকারত্ব’- বলা হয় চিঠিতে।

বিটিএমএ বলছে- গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, অস্বাভাবিক সুদহার ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রফতানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে টেক্সটাইল খাত সমস্যায় পড়েছে। আর ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ডাম্পিং মূল্যে সুতা আমদানি টেক্সটাইল মিলগুলোকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে।

বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধাসহ অন্য স্থলবন্দর বা কাস্টম হাউসগুলোয় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সুতার কাউন্ট পরিমাপক যন্ত্র, দক্ষ জনবলের অভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য অনেকাংশে সুষ্ঠুভাবে পরিচালন হচ্ছে না। ফলে সুতার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আমদানির অনুমতিসহ আংশিক শিপমেন্টের অনুমতি বিদ্যমান থাকায় দেশীয় টেক্সটাইল, বিশেষ করে স্পিনিং মিলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এছাড়া স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানিতে, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অননুমোদিত সুতার ব্যাপক বাজারজাতকরণের ফলে টেক্সটাইল মিলগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, একই সঙ্গে সরকার ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতা আমদানির ক্ষেত্রে আংশিক শিপমেন্টের অনুমতি দেয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় এ সুযোগের অপব্যবহার করে একটি এলসির বিপরীতে পুনঃচালানে একই এলসির অধীনে একাধিকবার অনুমোদনের চেয়ে বেশি সুতার অনুপ্রবেশ ঘটছে। এসব কারণে দেশীয় টেক্সটাইল খাতের ন্যায্য স্বার্থ সংরণের জন্য সব স্থলবন্দরের কাস্টম হাউস ব্যবহার বন্ধ করে শুধু সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার ওপর নগদ প্রণোদনা হ্রাসের আগের সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় মিলগুলোর কাছে সুতার বিপুল মজুত তৈরি হয়েছে। অন্য দেশগুলোর সুতা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে দামের দিক থেকেও প্রতিযোগিতা করতে পারেননি টেক্সটাইল মিল মালিকরা। পোশাকশিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ৩০ কাউন্ট সুতার প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ এখন ৩ দশমিক ৪০ ডলার। একই সুতা ভারত থেকে আমদানি করলে ২ ডলার ৯০ সেন্ট দাম পড়ছে। যে কারণে স্থানীয় মিল থেকে কেনায় আগ্রহী হচ্ছেন না তারা। ●

অকা/বাণিজ্য/ফর/বিকাল/২৮ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 9 months আগে

Leave A Reply

Exit mobile version