অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
এলডিসি (স্বল্পোন্নত) গ্র্যাজুয়েশন সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি এখন শক্তিশালী থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেশের অর্থনীতি এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় পড়ে গেছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যাংক খাতের দুরবস্থা, সিন্ডিকেট, অলিগার্ক শ্রেণীর উত্থান ও ঋণখেলাপি বাড়ছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে লিকেজ বা দুর্বলতাগুলো চিহ্নিতের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গুলশানের একটি হোটেলে ১২ জুন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট ডায়ালগে অংশ নিয়ে সরকারকে তারা এ পরামর্শ দেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশের গত এক-দেড় দশকের উন্নয়ন কৌশলে কর্মসংস্থান গুরুত্ব পাচ্ছে না। এখন ৫০ শতাংশের বেশি তরুণ আর এ দেশে ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না। এ দেশের পরিশ্রমী উদ্যোক্তারা সোনার ডিম পাড়া হাঁস। কিন্তু এসব হাঁস জবাই করে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ব্যবসার পরিবেশ তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লাল ফিতার দৌরাত্ম্য তো এখনো প্রবলভাবে বিদ্যমান। তাই দেশের সম্ভাবনা রাজনৈতিক অর্থনীতির লৌহ ত্রিভুজে আটকে আছে। এ ত্রিভুজ ভাঙতে গেলে বাজেটের আলোচনায় এসব সমস্যা তুলে ধরতে হবে।’
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমএ মান্নান বলেন, ‘এ মুহূর্তে কিছু মেগা প্রকল্প পিছিয়ে দেয়া যেত। আমরা আসলে বাস করি ভূতলে, কিন্তু বিনিয়োগ করি পাতালে। আমি মন্ত্রী থাকতে এমন অনেক প্রকল্প একনেকে পাস করতে হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে আমি একমত ছিলাম না। দেশে এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে। তাই জনগণের অর্থ কতটা জনকল্যাণে ব্যয় হচ্ছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। জনগণ এসব প্রকল্প থেকে কী পাচ্ছে কিংবা আদৌ পাচ্ছে কিনা সেটা দেখা দরকার। আর আমাদের এখানকার মূল্যস্ফীতি মূলত প্রবৃদ্ধির বাই প্রডাক্ট।’
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের আগে দেশে অলিগার্ক ও সিন্ডিকেট শ্রেণী এতটা সামনে আসেনি। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এতটা প্রকট ছিল না। তাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে না আনলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক হবে না। অর্থনীতির লিকেজ নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।’
এ দেশে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ এখনকার মূল্যস্ফীতির একমাত্র কারণ হলো সিন্ডিকেট। খাতুনগঞ্জে এখন আর ছোট আমদানিকারক নেই। সবাই বড় জাহাজে পণ্য এনে সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করছে। ১০০ লোকের সিন্ডিকেটের কারণে ১৭ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি।’
কালো টাকা সাদা করার জন্য ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করে চুরি-ডাকাতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে বলেন, ‘চুরি উৎসাহিত করে কি অর্থনীতি শক্তিশালী করা যাবে? যদি টাকা ফেরত আনতে চান তাহলে কানাডা-মালয়েশিয়ায় যাদের বাড়ি আছে তাদের ধরে আনেন না। দেশে এখন ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হলেও ৩০ হাজরের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। ৪০ শতাংশ বা অতিরিক্ত ১৪ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা বসিয়ে রেখে খরচ বহন করতে হবে।’
শিক্ষা বাজেট নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট অনেকটা কাগুজে। কারণ সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত থেকে এ বছর ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি বাড়লেও উপবৃত্তির টাকা বাড়ানো হয়নি। এটা ন্যূনতম ৫০০ টাকা করার দাবি রয়েছে শিক্ষার্থীদের।’
সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আমাদের সব চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করা উচিত। অপ্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রদর্শিত বা ছায়া অর্থনীতির একটি হিসাব বের করতে পারে সরকার। তাছাড়া রফতানি, বিদেশী বিনিয়োগ ও কৃষির বিভিন্ন সরকারি তথ্য নিয়ে অসংগতি দেখা যায়। এসব নিয়েও কাজ করা যেতে পারে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট দেয়া হয়েছে, যেখানে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘জিডিপি আর মাথাপিছু আয় বাড়লেও শ্রমিকের আয় কি বাড়ছে? মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে শ্রমিকদের হয় বেশি কাজ করতে হবে নয়তো কম খেতে হবে। আর অতিরিক্ত কাজ করলে মানসিকসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে জীবন ক্ষয় করা শ্রম দিয়ে উৎপাদনশীলতা কতটা বাড়ানো যাবে?’
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সভাপতিত্বে আলোচনায় আরো অংশ নেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। ●
অকা/অখা/ফর/সকাল/ ১৩ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে