অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের রাজস্ব আদায় প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এ অবস্থার উন্নতি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এ ধীরগতির কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং এর পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছেন। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা কম হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম।
বিশ্বব্যাংকও পূর্বে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও তা এখন ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা মহামারির বছরের কাছাকাছি।
বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং রাজস্ব আদায়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকায় অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, "জুলাই ও আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, যা বর্তমান রাজস্ব পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর আগে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশা অনুযায়ী নাও হতে পারে।"
তবে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে, যা অর্থ বছরে কাজে লাগানো যেতে পারে। যদি অর্থনীতি দ্বিতীয়ার্ধে গতি অর্জন করে, তাহলে রাজস্ব আদায় বাড়তে পারে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের (২০২৪-২৫) প্রথম প্রান্তিকে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, আগস্টে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বরে ২৯ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্যে আরও দেখা গেছে, আমদানি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কমে গেছে। তবে, একই সময়ে আয়কর আদায় আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাটের চেয়ে ভালো হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সত্ত্বেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে রাজস্ব আদায় বাড়ার কথা ছিল।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, "জুলাই ও আগস্টে রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত হলেও, এই সময়ে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে রাজস্ব বৃদ্ধির সুযোগ থাকা উচিত ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "তবে, গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি উন্নত হওয়া কিছুটা স্বস্তির বিষয়।"
বিশেষজ্ঞরা আমদানি কমে আসাকেও রাজস্ব ঘাটতির একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ফরিদ উদ্দিন এই কমে আসাকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং চলমান ডলার সংকটের সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম দুই মাসে আমদানি পরিশোধ (এলসি নিষ্পত্তি) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি কমে গেছে।
এনবিআর প্রথম প্রান্তিকে ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৬ শতাংশ কম, যা দেশের রাজস্ব পরিস্থিতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে। ●
অকা/রা/ই/ সকাল, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

