অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এ বন্দরে ৭৬টি বিদেশি জাহাজ আসে। আর এ বছরের জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৮২টি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মোংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণসহ ১৩ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন দেওয়া এ প্রকল্পের ফলে দেশের দণিাঞ্চলের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার বন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন হবে সম্প্রতি।
‘পশুর চ্যানেলে সংরণ ড্রেজিং’-নামে একটি প্রকল্প চলমান। এছাড়া বন্দর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং শেষ হলে ৯.৫০ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের
জাহাজ মোংলাবন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে।
পণ্য আমদানি-রফতানিতে রেকর্ড : নতুন বছরের প্রথম মাসে মোংলায় বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বেড়েছে। বেড়েছে কনটেইনার পণ্যবাহী জাহাজের আগমনও। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন বন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জাহাজের শ্রমিকরা। বেশি সংখ্যক জাহাজ আসায় বেড়েছে বন্দরের আয়ও।
মোংলাবন্দর কর্তৃপরে উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থ-বছরে প্রথম ৭ মাসে মোংলা বন্দরে ৪৯৬টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৩০০ মে. টন পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। এর মধ্যে ২৩টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকে ১২ হাজার ৮৩টি ইইউজ কন্টেইনার লোড-আনলোড এবং ১২টি গাড়ির জাহাজ থেকে ৬,৭৮১টি রিকন্ডিশন গাড়ি খালাস করা হয়। ২০২৫ সালের শুরুতে মোংলা বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম চার দিনে এ বন্দরে ১৭টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারিতে পোর্ট লিমিটেডের মধ্যে জেটিতে দুইটি কন্টেইনারবাহী জাহাজসহ মোট ২০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। মাকরুজ্জামান বলেন, দণি-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট কিংকার, সার, মোটরগাড়ি, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাতদ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাকড়া, কে টাইলস, রেশমী কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট : বন্দর কর্তৃপরে সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগে ব্যবহারকারীরা (স্টেকহোল্ডার) সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সমতা আরও বাড়বে। মোংলা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (সিএন্ডএফ) সভাপতি মো. মাহমুদ আহসান টিটো বলেন, মোংলাবন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া নতুন প্রকল্পও একনেকে পাস হয়েছে, যা বন্দরের জন্য ইতিবাচক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরও বেশি আগ্রহী হবেন ব্যবসায়ীরা।
এ অঞ্চলের অর্থনীতির আরও উন্নয়নের সম্ভাবনা : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি মোংলা বন্দরের সুবিধা বাড়াতে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ নামের চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অর্থায়ন ৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। বাকি অর্থায়ন করবে সরকার। যেটি বন্দরের জন্য একটি বড় ধরনের সুখবর। গেল বছর বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ পরিস্থিতি, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, বন্যা—সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে রেকর্ড হচ্ছে মোংলা বন্দরে। এছাড়া নতুন বছরের শুরুর মাসেই পণ্য খালাসে বিদেশি জাহাজ আসার রেকর্ড গড়েছে মোংলা সমুদ্রবন্দর। আশা করা যাচ্ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের অর্থিনীতির আরও উন্নয়ন হবে।
বাড়ছে পরিধি, বাড়বে গুরুত্ব : অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে মোংলা বন্দরের পরিধি। এতে গুরুত্ব বাড়বে বন্দরের। সমতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক হাব তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে মোংলা বন্দর উন্নয়নে নির্মিত হচ্ছে আরও ছয়টি জেটি। জেটিগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে একদিকে যেমন বাড়বে বন্দরের সমতা অন্যদিকে ব্যবহারকারীরাও পাবেন নিরবচ্ছিন্ন সেবা। কমে আসবে কন্টেইনার খালাসের সময়ও। এতে অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হতে পারে বন্দরটি। এখান থেকে সরকারের আয়ও বহুগুণ বাড়বে।
বন্দর চেয়ারম্যানের ভাষ্য : মোংলা বন্দর কর্তৃপরে চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রজেক্টগুলো আগামী ২৫ জুনের মধ্যে শেষ হবে। শুধু একটি প্রজেক্টের সময় বাড়ানো হয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমাদের জি টু জি জেটির জন্য একনেকে বিল পাস হয়েছে। উপদেষ্টা মহোদয়ের অকান্ত পরিশ্রমে ২১৪ কোটি টাকা কমিয়ে এই প্রজেক্ট পাস হয়েছে এবং আমাদের এনওসি প্রজেক্টরে কিছু রিভিউ পুনরায় করতে হবে। এ প্রজেক্টে আমাদের সমীাটি আর একবার করতে হবে। এর পর আমাদের এখনই যেটা প্রয়োজন সেই দিকে এগোবো। ড্রেজিং কার্যক্রম দ্রুততার সাথে চলছে। এছাড়া আমরা ফ্রোজেন ফুডস নিয়ে কাজ করছে যারা তাদের সঙ্গে কথা বলছি, তারা যেন মোংলা বন্দর ব্যবহার করেন। জুট মিল মালিকদের সাথে বসবো তারা যেন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে না গিয়ে আমাদের মোংলা বন্দর ব্যবহার করে। ইপিজেড বেপজা তাদের সঙ্গে পুনরায় কথা বলছি, তারা যেভাবে আমাদের বন্দর ব্যবহার করছে এটা যেন চলমান রাখে। ●
অকা/আখা/ফর/সন্ধ্যা/৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 10 months আগে
