অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
একীভূত হওয়া আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বস্তি দিতে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। তবে এই সুবিধা কবে থেকে কার্যকর হবে—সে বিষয়ে এখনও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা সময় চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি স্পষ্ট করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু গণমাধ্যমে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকেই মার্জারের আওতাভুক্ত একটি ব্যাংকের আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারবেন—এমন খবর প্রচারিত হলেও তা সঠিক নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, পাঁচটি একীভূত ব্যাংকের আমানতকারীদের বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের নির্দিষ্ট সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর আর্থিক সংকটে থাকা পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংক হলো—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
পরবর্তী সময়ে ৯ নভেম্বর গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডের এক বিশেষ অনলাইন সভায় এসব দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে পরিচালনার জন্য নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-কে প্রাথমিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বিগত সরকারের সময়ে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ তুলে নেয়। এসব ঋণ কেলেঙ্কারি ও দুর্বল তদারকির কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শেষ পর্যন্ত পাঁচটি সংকটাপন্ন ব্যাংক একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কিভাবে টাকা তুলতে পারবেন আমানতকারীরা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নতুন স্কিম কার্যকর হলে যেসব আমানতকারীর হিসাবে দুই লাখ টাকা বা তার কম রয়েছে, তারা পুরো অর্থ একবারেই উত্তোলন করতে পারবেন। আর যাদের জমার পরিমাণ দুই লাখ টাকার বেশি, তারা প্রতি তিন মাস অন্তর সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে টানা দুই বছর পর্যন্ত উত্তোলনের সুযোগ পাবেন।
তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু ছাড়ও রাখা হয়েছে। ৬০ বছরের বেশি বয়সী আমানতকারী এবং ক্যানসার বা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত গ্রাহকরা প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত সীমার বাইরে গিয়েও অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
ব্যাংকের মূলধন ও আর্থিক চিত্র
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার সরাসরি ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ার রূপান্তরের মাধ্যমে। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ আমানতকারীর মোট জমা রয়েছে আনুমানিক ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার একটি বড় অংশই ইতোমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
সারা দেশে এই ব্যাংকগুলোর রয়েছে ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ। একীভূত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একই এলাকায় অবস্থিত একাধিক শাখা একত্র করে একটি বা দুটি শাখায় রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিচালন ব্যয় কমাতে এরই মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা গড়ে ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে, আমানতকারীদের আস্থা ফেরানো এবং দীর্ঘদিনের আর্থিক ক্ষত সামাল দিতে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’কে ঘিরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনর্গঠন পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/দুপুর/২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 days আগে

