অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
শুধু সোনার বার নয়, কড়াকড়ি করা হয়েছে সোনার গয়না আনার ক্ষেত্রেও। আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে একজন যাত্রী বছরে মোট ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারবেন।

বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে দিন দিন সোনা আরও দামি হচ্ছে। সোনার আকাশছোঁয়া দামের জন্য বিয়েশাদির মতো পারিবারিক অনুষ্ঠানে অলংকার কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত ক্রেতারা। জুয়েলারি ব্যবসা আরও সংকটের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। দেশের বাজারে এখন ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৬ টাকা। ২০২৪ সালের শেষের দিকেও দাম ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৬ টাকা। এর মানে, ছয় মাসের ব্যবধানে সোনার দামের ভরি বেড়েছে ৩১ হাজার ৭৫০ টাকা।

দুবাই ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সোনার দাম কত বেশি? দুবাই জুয়েলারি গ্রুপ নামে জুয়েলার্স সমিতির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ৯ জুন ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি ছিল ৪ হাজার ৩১৮ দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৭ টাকা। ভারতের বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে দেয়া দর বলছে, দেশটিতে ৯ জুন সোনার দোকানে প্রতি ভরির দর ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯৬৫ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩২ টাকা। এর মানে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা বাংলাদেশের চেয়ে দুবাইয়ে ২৮ হাজার ৬৫৯ টাকা এবং ভারতে ১৬ হাজার ৯০৪ টাকা কমে কেনা যায়।

বিশ্ব বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে সোনার দামের এত ব্যবধানের বিষয়ে জুয়েলার্স সমিতির নেতারা ঘুরিয়েফিরিয়ে কয়েকটি কথাই বলেন, সোনা বেচাকেনায় অন্য দেশে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ থাকলেও বাংলাদেশে নেই। আবার বাণিজ্যিকভাবেও সোনা আমদানি হয় না। ব্যাগেজ বিধিমালায় শুল্ক দিয়ে বিদেশ থেকে আসা সোনা দেশের চাহিদার বড় অংশ মেটায়। তার বাইরে পুরোনো অলংকার দিয়েও কিছুটা চাহিদা মেটানো হয়। অবশ্য অবৈধ পথেও অনেক সোনা আসে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশে সোনার ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে ২০১৮ সালে স্বর্ণ নীতিমালা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরের বছর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ব্যাংকসহ ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানির লাইসেন্স দেয়। পরে আরও একটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পায়। শুরুতে একাধিক প্রতিষ্ঠান কয়েকটি চালানে সোনা আমদানি করেছিল। তবে ধীরে ধীরে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত ডলার–সংকট, অনুমতি পেতে সময়ক্ষেপণ ও ভ্যাটের কারণে আমদানিতে আগ্রহ হারান ব্যবসায়ীরা।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় সোনা আনার সুযোগ কমিয়ে অর্ধেক করা হয় (২৩৪ গ্রাম থেকে কমিয়ে ১১৭ গ্রাম)। পাশাপাশি ভরিপ্রতি শুল্ক দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে ব্যাগেজ বিধিমালায় সোনা আনার ওপর আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এত দিন বিদেশ থেকে ফেরার সময় আগে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার বার আনা যেত। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন কোনো যাত্রী বছরে একবারই শুল্ক দিয়ে একটি সোনার বার আনতে পারবেন। এ ছাড়া সোনার বার আনার ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে একটি সোনার বার আনার জন্য ৫০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।

জুয়েলার্স সমিতির একজন নেতা বলেন, যেহেতু বৈধ পথে সোনা আমদানি হয় না, দেশে সোনা পরিশোধনের কোনো কারখানাও নেই, সেহেতু ব্যাগেজ বিধিমালায় অলংকার আনায় কড়াকড়ি আরোপটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে অবৈধ পথে সোনা আসা বাড়বে। তখন দাম নিয়ে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে সোনা ও রুপার অলংকারের বিক্রিতে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ, ডিলারদের কাছে ব্যবসায়ী পর্যায়ে সোনা কেনায় ভ্যাট অব্যাহতি, সোনা আমদানিতে বিমানবন্দরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, সোনা পরিশোধন কারখানার জন্য ১০ বছরের কর অব্যাহতিসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিল জুয়েলার্স সমিতি। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সোনার আমদানি সহজ করে ব্যাগেজ বিধিমালায় সোনার বার ও অলংকার আনায় কড়াকড়ি করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন সমিতির নেতারা। শেষ পর্যন্ত এনবিআর শুধু এ প্রস্তাবটি আমলে নেয়। ●

অকা/বাণিজ্য/ফর/দুপুর/১০ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 6 months আগে

Leave A Reply

Exit mobile version