অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দক্ষিণ এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আঞ্চলিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে দুই দেশ সম্প্রতি করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি সমুদ্রপথে শিপিং পরিষেবা চালু করেছে, যা তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য গতি এনেছে। এই নতুন উদ্যোগের ফলে পণ্য পরিবহনের সময় নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। পূর্বে মধ্যবর্তী বন্দর ব্যবহারের কারণে পণ্য পরিবহনে যেখানে প্রায় ২৩ দিন সময় লাগত, এখন সরাসরি রুটে তা কমে মাত্র ১০ দিনে নেমে এসেছে, যা ১৩ দিনেরও বেশি সময় সাশ্রয় করছে। এর ফলস্বরূপ, লজিস্টিক ব্যবস্থার দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই পরিবহন ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জাতীয় পরিষদে জমা দেওয়া এক লিখিত প্রতিবেদনে এই ঐতিহাসিক অগ্রগতির কথা নিশ্চিত করেছেন এবং বলেন যে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে।
বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানি পণ্যের জন্য বন্দরগুলোতে প্রযোজ্য ১০০ শতাংশ পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে। ইসহাক দার এই সিদ্ধান্তকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ‘যুগান্তকারী অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ দুই দেশের বাণিজ্যিক মহলে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং কাস্টমসে বিলম্ব কমার কারণে পণ্য পরিবহনের গতি আরও দ্রুত হবে। কাস্টমসে বিলম্ব কমে যাওয়ায় পাকিস্তানি রপ্তানি এখন বাংলাদেশের বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর হওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক দিকটিও শক্তিশালী হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (JEC) গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করা হয়। JEC-এর আলোচনার ধারাবাহিকতায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হওয়া একটি চুক্তির ভিত্তিতে পাকিস্তান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছে এবং মোট ২ লাখ টন চাল রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগামী মাসগুলোতেও এই কাঠামোর অধীনে চাল রপ্তানি অব্যাহত থাকবে বলে পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে।
বাণিজ্যের অগ্রগতি শুধু শিপিং এবং খাদ্যশস্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও উৎপাদন খাতে পাকিস্তানের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রমাণ মেলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবং ডেনিম এক্সপোতে পাকিস্তানের দুই শতাধিক কোম্পানির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
সামুদ্রিক যোগাযোগের পাশাপাশি দুই দেশ এখন সরাসরি আকাশপথ চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসহাক দার জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পাকিস্তানের দুটি বেসরকারি বিমান সংস্থাকে ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। উভয় পক্ষ এখন এই ফ্লাইট পরিচালনার সময়সূচি ও লজিস্টিকস চূড়ান্ত করার কাজ করছে। এই সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হলে তা ব্যবসা এবং পর্যটন—উভয় ক্ষেত্রেই দুই দেশের সম্পর্ককে আরও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ●
অকা/প্র/ই/সকাল/৮ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 weeks আগে

