পাকিস্তানভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশের ব্যবসা অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। বাংলাদেশে আলফালাহর কার্যক্রম, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণ সম্পর্কিত ব্যাংক এশিয়ার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
১৭ এপ্রিল ২০২৪ বুধবার পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে তথ্যটি প্রকাশ করা হয় এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে ব্যাংক এশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া এ সম্পর্কিত নোটিশটি প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। দুটি ব্যাংকই নিজ দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিবেচনায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিবেবচনায় এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক আলফালাহ অধিগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও এতে অনুমতি রয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকতার বিভিন্ন ধাপ পার হতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
ব্যাংক এশিয়া ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সারাদেশে ১৩৫টি শাখা এবং ৫ হাজার এজেন্ট আউটলেট নিয়ে কার্যক্রমে থাকা ব্যাংকটিতে বর্তমানে ২ হাজার ৬০৪ জন কর্মী রয়েছেন। আর ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও আফগানিস্তানে কার্যক্রমে আছে। আবুধাবি গ্রুপের মালিকানা ও পরিচালনায় কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকটি। ব্যাংক আলফালাহ ২০০৫ সালে বাহরাইনভিত্তিক শামিল ব্যাংক অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। ঢাকার গুলশান, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা ও মিরপুর এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটে মোট সাতটি শাখা নিয়ে কার্যক্রমে রয়েছে ব্যাংকটি।
জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক এশিয়ার মোট আমানত ছিল ৩৬ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের বছর শেষে ৩৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ ছিল ২৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের যা ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ। বিদ্যমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সাড়ে ১২ শতাংশ মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আবার, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে যা ছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। তবে ঋণস্থিতি কমে গত বছর শেষে ১ হাজার ৬১৭ কোটি টাকায় নেমেছে। আগের বছর শেষে যা ছিল ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা মাত্র ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ব্যাংকটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় শেয়ারহোল্ডার মূলধন বেড়ে হয়েছে ৬১৯ কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে যা ছিল ৫৮৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এ মূলধন মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৫৮ শতাংশের বেশি। গত বছর ব্যাংকটি ১৩৮ কোটি টাকার পরিচালন আয় করে। এর মধ্যে ৭০ কোটি টাকার পরিচালন ব্যয় শেষে পরিচালন মুনাফা হয় ৭২ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা হয়েছে ৪৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের বছর নিট ছিল ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সম্প্রতি চরম খারাপ অবস্থায় পড়া ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর মাধ্যমে আর্থিক ভিত্তি শক্ত করার লক্ষ্যে কিছু ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট কাটানো, মূলধন পরিস্থিতি ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, উচ্চ খেলাপি ঋণ কমানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় এরই মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা, সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল, বাংলাদেশ কৃষির সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি সিটির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক এবং ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক এক হয়ে যেতে বলা হয়েছে। এখন এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপনের পর এমওইউ সই হবে।
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে