অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী কোনো ধরনের স্বস্তি পাচ্ছে না। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর তারা যে আশা করেছিল গত এক মাসে সেটির কোনো ধরনের পূর্বাভাস পাচ্ছে না। অব্যাহত পতন ও মন্দায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। ধারাবাহিক পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ার বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ৭৭ শতাংশ বিনিয়োগকারী এখন শেয়ার বিক্রির জন্য ঘুরছে। গতকালও চট্টগ্রামের প্রধান সূচক পৌনে ২০০ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। ঢাকাতে প্রায় ৫০ শতাংশ পয়েন্ট। বাজারমূলধন ০.৪৯ শতাংশ বা তিন হাজার ৪১০ কোটি ৯ লাখ টাকা কমেছে।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর দিনের শুরু থেকেই বাজার ছিল নিম্নমুখী। মধ্যে পতনের হারটা কমে একক অঙ্কে চলে আসে। কিন্তু এরপর আবার বাড়তে থাকে সূচক থেকে পয়েন্ট হারানোর পরিমাণ। ১০.৩৮ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৪.৬৭ পয়েন্ট হারায়। শরিয়াহ সূচক ৬.৯৪ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১০.১৩ পয়েন্ট হারিয়ে ফেলে। এক ঘণ্টা ১০ মিনিট পর কিছুটা পয়েন্ট ফিরে আসে, তখন পয়েন্ট হারায় ডিএসইএক্স ৭.১৭ পয়েন্ট। ১৯৫টি কোম্পানি এই সময় দর হারানোর তালিকায় থাকে। দিন শেষে ডিএসইএক্স ৪৯.৭৬ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক ৬.২৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭.৬৭ পয়েন্ট হারায়। ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৮ সেপ্টেম্বর হাতবদল হয়েছে মোট ৬২১ কোটি ৩৫ রাখ ৬৮ হাজার ৪৪৪ টাকা বাজারমূল্যে। যা আগের দিনের চেয়ে ৫৭ কোটি টাকা কম।
লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৯টি কোম্পানির মধ্যে দরপতনে ৭৬.৯৪ শতাংশ বা ৩০৭টি, দর বৃদ্ধিতে ৬৭টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৫টির। এখানে এ শ্রেণীর ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার দরপতনে হয়েছে ১৮৮টির। বাজার মূলধন তিন হাজার ৪১০ কোটি ৯ লাখ টাকা কমে এখন ছয় লাখ ৯১ হাজার ২৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় নেমেছে।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৮ সেপ্টেম্বর ২৮টি কোম্পানির চল্লিশ লাখ ৪২ হাজার ৫৩০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ২৫ কোটি ৯৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আট প্রতিষ্ঠানের। কোম্পানিগুলো হলোÑ আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাভেলো আইসক্রিম, খান ব্রাদার্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইবনে সিনা ফার্মা, আইএফআইসি ব্যাংক এবং বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। এই আট প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ১৫ লাখ টাকারও বেশি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। কোম্পানিটির সাত কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের ছয় কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম। অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যেÑ খান ব্রাদার্সের ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকার, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৬৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ইবনে সিনা ফার্মার ৬৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫৩ লাখ টাকার এবং বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম স্টকের দু’টি মূল সূচকই শতাধিক পয়েন্ট হারিয়েছে গতকালও। সিএএসপিআই ১৭২.৯৯ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ১০৩.২৮ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ৭০.৩১ পয়েন্ট ঝরে গেছে। ২৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট সাত কোটি ১৪ লাখ ২৫ হাজার ১১৪ টাকা বাজার মূল্যে। ২২৮টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ছিল মাত্র ৩৯টি, দর হারিয়েছে ১৭০টি এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি।
বাজার বিশ্লেষণে রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, রোববারের মতো ৮ সেপ্টেম্বর বাজারে মন্দাভাব ছিল। বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯.৭৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৬৩০ পয়েন্ট হয়েছে। পুরো সময়জুড়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় ছিলেন। বাজারে বিক্রেতাদের সক্রিয় অবস্থানে দেখা যায়। লেনদেন ৮ সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৫৭ কোটি টাকা কমে ৬২১ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী ছিল। মূলধন গতদিনের চেয়ে ০.৪৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১ শতাংশ এবং টার্নওভার ৮ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে একটি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৮টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ২৫.৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ৪.১৭ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২০.০২ পয়েন্ট কমে ১১৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪.৫ কোটি টাকা, যা গত দিনের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি। ●
অকা/পুঁবা/ফর/সকাল/১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে