অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত আবারও বিশ্ববাজারে তার সক্ষমতার দৃঢ় প্রমাণ দিয়েছে। শুরুতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও, বাস্তবে দেখা গেছে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার তুলনামূলক কম থাকায় এটি এখন এক নতুন সুযোগে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের বাজার হারানো অর্ডারের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে, যা খাতটির সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা)-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৬৬ শতাংশ বেশি। শুধু জুলাই মাসেই বাংলাদেশ রফতানি করেছে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পোশাক। অপরদিকে, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মোট ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৪.৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, যেখানে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ছিল সীমিত, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি।
অটেক্সার দীর্ঘমেয়াদি তথ্যও বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট করছে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৫.৮৭ শতাংশ। শুধু ২০২৪ সালেই রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩৪২.৮৫ মিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করেছে।
রফতানিকারকরা জানাচ্ছেন, পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে অর্ডার প্রবাহ বাড়ছে এবং আগামী মৌসুমগুলোতে এই প্রবাহ আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তাদের প্রত্যাশা। তাদের মতে, বাংলাদেশে শুল্কহার ২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে কাজ করছে। ফলস্বরূপ, চীন ও ভারতের অর্ডার সরাসরি বাংলাদেশে চলে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু চীন বা ভারত নয়, ভবিষ্যতে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের অর্ডারেরও একটি অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হতে পারে, যা রপ্তানি আয় বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা স্বল্পমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা কমলেও দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী। তাদের মতে, যদি মানোন্নয়ন ও পণ্যের বহুমুখীকরণে এখনই গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশ কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বৈশ্বিক বাজারেও আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে। ●
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 days আগে