অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নয়টি অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) অবসানের সিদ্ধান্ত শেয়ার বাজারে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলস্বরূপ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা তৃতীয় কার্যদিবসেও ব্যাপক দরপতন ঘটে। হঠাৎ বেড়ে যাওয়া উদ্বেগে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন থেকে সরে দাঁড়ানোয় বাজার কার্যত লিকুইডিটি সংকটে পড়েছে।
লেনদেনের দৈনিক পরিমাণ আগের দিনের ৩৬৪ কোটি টাকা থেকে নেমে এসেছে ২৬৮ কোটি টাকায়—প্রায় ২৬.৩৭ শতাংশ কম। গত ছয় মাসে এর চেয়ে কম লেনদেন দেখা গিয়েছিল শুধুমাত্র ১৫ জুন, যখন লেনদেন ছিল ২৬৩ কোটি টাকার সামান্য বেশি। এই পরিসংখ্যানই জানিয়ে দেয়, বাজারে অনিশ্চয়তা এখন কতটা গভীর।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চরম সতর্কতা তৈরি হয়েছে। বড় ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে নিট বিক্রি নিট কেনার তুলনায় বেশি থাকায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে—বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে।
এর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নয়টি এনবিএফআই অবসানের ঘোষণা বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ধুকতে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিশেষ করে যেসব বিনিয়োগকারী দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের চাপ সহ্য করছেন, তাদের মধ্যে নতুন করে ভরসাহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য—স্বল্পমেয়াদে বাজারে উল্লেখযোগ্য টার্নঅ্যারাউন্ডের কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং নতুন মার্জিন ঋণ নীতিমালা কার্যকর হওয়ায় কিছু বিনিয়োগকারী বাধ্য হয়েছেন শেয়ার বিক্রি করতে, যা বাজারে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ তৈরি করেছে এবং পতনকে আরও তীব্র করেছে।
তবে কিছু আশাবাদের ইঙ্গিতও আছে। বাজার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিষ্কার হলে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব ধীরে ধীরে ইতিবাচক হতে পারে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সাধারণত বাজার অংশগ্রহণ বাড়ায় এবং লেনদেনে নতুন গতি আনে।
এ ছাড়া টানা দরপতনের ফলে বাজার এখন উল্লেখযোগ্যভাবে ‘অতিরিক্ত বিক্রিত’ (oversold) অবস্থায় রয়েছে। এর মানে, অনেক শক্তিশালী ও fundamentally sound কোম্পানির শেয়ার এখন অবমূল্যায়িত দামে লেনদেন হচ্ছে। ফলে কিছু সতর্ক কিন্তু কৌশলী বিনিয়োগকারী এই পরিস্থিতিকে সম্ভাব্য লাভের সুযোগ হিসেবে দেখছেন এবং নতুন করে পজিশন নেওয়া শুরু করেছেন।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কঠোর নীতিগত পদক্ষেপ এবং মার্জিন ঋণচাপ—সবকিছু মিলেই বাজারে জটিল চাপ তৈরি করেছে। পরিস্থিতি সাময়িকভাবে নেতিবাচক হলেও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ফিরে এলে বাজারে নতুন করে প্রাণ ফিরতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 hours আগে

