অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সরকার ধীরে ধীরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে তুলনামূলক কম সুদের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দিকে ঝুঁকছে। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সুদ ব্যয় নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে ২০২৬ সালের শুরুতে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার নেমে ১০ শতাংশের কাছাকাছি আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যেসব খাত থেকে ঋণ নেয়, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্র অন্যতম হলেও এর সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে সরকারের ঋণ ব্যয় বেড়ে যায় এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি হয়। এ কারণে সরকার এখন কম ব্যয়বহুল অর্থায়ন উৎস হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডকেই মূল হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১১টি সঞ্চয় স্কিম চালু রয়েছে—এর মধ্যে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র, দুটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, একটি ডাক জীবনবীমা, একটি প্রাইজবন্ড এবং প্রবাসীদের জন্য তিনটি বিশেষ বন্ড। প্রতিটি স্কিমে মুনাফার হার ও মেয়াদ আলাদা হলেও সামগ্রিকভাবে সুদহার হ্রাসের প্রবণতা চলমান।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদ ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে একাধিক স্কিমে ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমানো হয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে জানুয়ারিতে আরও ১ থেকে ১.৫ শতাংশ কমবে, ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য সঞ্চয়পত্রের আকর্ষণ আগের তুলনায় অনেক কমে যাবে।
অন্যদিকে, বর্তমানে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের গড় সুদহার ৯.৫ শতাংশের কাছাকাছি, যা সরকারের জন্য তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ অক্টোবরের সর্বশেষ নিলাম অনুযায়ী—
-
৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ ৯.৫০ শতাংশ,
-
২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদ ৯.৪৪ শতাংশ, এবং
-
১০ বছর মেয়াদি বন্ডের গড় সুদ ৯.৯০ শতাংশ।
ফলে সঞ্চয়পত্রের তুলনায় ট্রেজারি ইন্সট্রুমেন্টে ঋণ নেওয়া সরকারের জন্য অনেক সস্তা, নমনীয় এবং বাজারভিত্তিক হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপ কেবল ঋণ ব্যয় কমানোর জন্য নয়; বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত পুনর্বিন্যাস, যার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরও বাজারনির্ভর ও স্বচ্ছ করার চেষ্টা চলছে। সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ দেওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হলেও এতে সরকারের সুদ ব্যয় প্রতিবছর বাড়ছে, যা বাজেট ভারসাম্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যদিকে, ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ঋণ নেওয়া তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, কারণ এটি ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত এবং বাজারচাহিদা অনুযায়ী সুদ নির্ধারিত হয়।
ফলস্বরূপ, আগামী বছরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি এই খাতে সরকারের নির্ভরতা আরও কমবে। সরকার যখন ট্রেজারি বিল–বন্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন অভ্যন্তরীণ ঋণ কাঠামো ধীরে ধীরে বাজারমুখী হচ্ছে—যা একদিকে রাজস্বের ওপর চাপ কমাবে, অন্যদিকে আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুদব্যয়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/১৬ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 16 hours আগে