অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে সাম্প্রতিক সময় গার্মেন্ট খাতে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আমেরিকা, ইউরোপসহ পোশাক খাতের বড় বাজারগুলোতে কাজের অর্ডার বাড়ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
দেশের পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন তৈরী পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতারা আগামী বছরের কার্যাদেশ নিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে নতুন কাজের অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে যে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছিল তা অনেকাংশ কেটে গেছে। এমনটাই জানিয়েছেন গার্মেন্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন সাম্প্রতিক শ্রম অস্থিরতার কারণে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার উৎপাদন তিগ্রস্ত হয়েছে। একই সাথে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা মূল্যের কাজের অর্ডার প্রতিযোগী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে আশার দিক হচ্ছে সাম্প্রতিক গার্মেন্ট খাতে স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্যাশন কোম্পানিগুলো নতুন অর্ডার নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
গার্মেন্ট খাতের নেতারা বলছেন, সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শ্রমিক নেতা এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে অস্থিরতার পর কারখানাগুলো এখন স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন করছে। এমন পরিস্থিতি বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে বলে তারা মনে করছেন।
একই সাথে পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন তারা এখন তাদের উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে বেশি অর্ডার পাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রধান বাজারগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হওয়াতে অনেক বেশি কাজের অর্ডার আসতে সাহায্য করছে বলে রফতানিকারকরা মনে করছেন।
সদ্য বিলুপ্ত বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বড় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কিছু ওয়ার্কঅর্ডার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে কিছু আন্তর্জাতিক ফ্যাশন কোম্পানি এখন ফিরে আসছে। গার্মেন্ট খাতে উৎপাদন এখন স্বাভাবিক ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন দেশ থেকে যেসব অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে তা দেশের মোট রফতানির প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ।
এদিকে ইপিবির তথ্যে দেখা যায় গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন গার্মেন্ট খাতের প্রায় ৪০০টি কারখানায় অস্থিরতার কারণে প্রায় ১৫ দিনের উৎপাদন তির সম্মুখীন হয়েছে। এসব কারখানা থেকে বার্ষিক রফতানি হয় প্রায় ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মূল্যের।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, পোশাক রফতানিকারকরা সাধারণত তাদের মতার ৮০ শতাংশের বেশি কাজ না করলে লাভ হতে পারবে না। তি কাটিয়ে উঠতে একটি গার্মেন্ট কারখানার জন্য কমপে তিন থেকে চার মাস পূর্ণ সমতায় কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।
স্প্যারো গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শোভন ইসলাম বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে আগামী বছরের জন্য নতুন অর্ডার নিতে শুরু করেছেন। তিনি মার্কিন বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, বছরের শেষে দেশটিতে পোশাক রফতানি ৭ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি হবে বলে তিনি মনে করেন।
জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান বলেন, তাদের কোম্পানি মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে কাজের ভালোই নতুন অর্ডার পাচ্ছেন। মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে উঠেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, তাদের কোম্পানি বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি করে। এই বছর শ্রমিকদের অসন্তোষ সত্ত্বেও তাদের কাজের অর্ডার পেতে তেমন সমস্যা হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুল্কসুবিধা আদায়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে তার ভাবমূর্তি ব্যবহার করতে পারেন। এতে চীন থেকে স্থানান্তরিত মার্কিন পোশাকের অর্ডারগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হবে বলে তিনি মনে করেন। ●
অকা/শিখা/ফর/রাত/২১ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

