অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নীতিগত ছাড়ে খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ প্রসারিত হলেও এটি দেশের ব্যাংক খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস সোমবার রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছে।
২০২৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নতুন সার্কুলার জারি করে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ সুবিধায় খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা যাবে। ঋণ সর্বোচ্চ ১০ বছরের মেয়াদে নবায়নযোগ্য এবং ঋণগ্রহীতা সর্বোচ্চ দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাবেন। খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে নবায়নের পর তা স্থগিত রাখতে হবে।
এই সুবিধার ফলে খেলাপি ঋণ সাময়িকভাবে কমে এসেছে বলে পরিসংখ্যানগত চিত্রে দেখা যেতে পারে। কিন্তু মুডিস মনে করে, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ব্যাংক খাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মুডিস খেলাপি ঋণ নবায়নের এই প্রক্রিয়াকে ‘ক্রেডিট নেগেটিভ’ বা ঋণখাতের জন্য নেতিবাচক হিসাবে অভিহিত করেছে। কারণ, এই ছাড়ে ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে পারলেও প্রকৃত ঋণ আদায় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডের কারণে গ্রাহকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করলে তার ব্যবসায়িক সক্ষমতা সঠিকভাবে বোঝা যাবে না। নবায়নের পর ৯০ দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের বিধান ব্যাংকের আইনি চাপ কমালেও ঋণ আদায়ের কার্যক্রমকে দুর্বল করে দেবে।
মুডিস উল্লেখ করেছে, অতীত অভিজ্ঞতাও ইতিবাচক নয়। ২০২২ সালে একই ধরনের ছাড় দিয়েও ব্যাংক খাত কোনো স্থায়ী সুফল পায়নি। বরং অনাদায়ী ঋণের প্রবণতা স্থায়ী হয়ে ওঠে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই গুরুতর আকার ধারণ করেছে। ২০২৪ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১.১ শতাংশ। ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪.১ শতাংশে, যা প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন নেমে এসেছে মাত্র ৩.১ শতাংশে, যেখানে নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। এটি ব্যাংক খাতের জন্য একটি গুরুতর সংকেত, যা আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তবে সব ব্যাংকের অবস্থাই সমানভাবে নাজুক নয়। মুডিসের মূল্যায়নে ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তাদের মূলধন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অন্যদের তুলনায় ভালো থাকায় তারা আস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এই নতুন ছাড় সাময়িকভাবে খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যাংক খাতের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে। ঋণ আদায়ের সংস্কৃতি দুর্বল হলে ব্যাংক খাতে অনাদায়ী ঋণ স্থায়ী রূপ পাবে এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে