তারেক আবেদীন ●
আইন লংঘন করে চলতি দায়িত্ব পালনকারী দেশের ৫টি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫টি বীমা কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণ হলেন- চতুর্থ প্রজন্মের গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর শেখ রাকিবুল করিম, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর রফিকুল ইসলাম, মার্কেন্টাল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর এস. কে. আব্দুর রশিদ, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর মোশাররফ হোসেন এসিআইআই এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া। খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
জানা গেছে, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর এর (এনএসআই) স্মারক নম্বর–০৩.১২.২৬৬৬.৫৪২.২৩.০০১.২৫-৫৩৪ সূত্র উল্লেখ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (অর্থ মন্ত্রণালয়) এর সচিবকে প্রেরিত সম্প্রতি এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এর পরিচালক-১২ র. হ. ম. আলাওল কবির। সে চিঠির সূত্র ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠিতে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বীমা কোম্পানিগুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সে কাজের ধারাবাহিকতায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই) সম্প্রতি এক তদন্ত করে। তাদের প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন পেশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর শেখ রাকিবুল করিম ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২২ মে অবধি ৪ বছর ৪ মাস ২১ দিন, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর রফিকুল ইসলাম ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২২ মে অবধি ৮ মাস ১৭ দিন, মার্কেন্টাল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর এস. কে. আব্দুর রশিদ ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২২ মে অবধি ১০ মাস ২১ দিন, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর মোশাররফ হোসেন এসিআইআই গত ১০ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ২২ মে অবধি ৭ মাস ১০ দিন এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ২২ মে অবধি ২ বছর ৪ মাস ১৭ দিন বীমা আইন লংঘন করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অনিয়মের বিপরীতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) এখন অবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
উল্লেখ্য, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর শেখ রাকিবুল করিম ৪ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত। কোম্পানিটিতে আইডিআরএ’র অনুমোদিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ না করায় গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং শর্ত হিসেবে পরবর্তি ৬০ দিনের মধ্যে সিইও নিয়োগ করতে বলা হয়। কিন্তু কোম্পানিটি প্রধান নির্বাহী পদে দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধভাবে দায়িত্বরত অযোগ্য শেখ রাকিবুল করিমের স্থলে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেয়নি। বরং এ পদে রেখে তাকে পদোন্নতি দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক আইডিআরএ’র এ নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ রাকিবুল করিম। একইভাবে রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ২ বছরের বেশি সময় ধরে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অবৈধভাবে কাজ করে চলেছেন। অনিয়মের জন্য ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং শর্ত হিসেবে পরবর্তি ৬০ দিনের মধ্যে সিইও নিয়োগ করতে বলা হয়। কিন্তু রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড সে নির্দেশের কর্ণপাত করেনি।
বিদ্যমান বীমা আইন, ২০১০ এর ৮০(৪) ধারা অনুয়ায়ি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে একাধারে ৩ মাস অধিক সময়ের জন্য শূন্য পদ রাখার বিধান নেই। তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) অপরিহার্য় পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সময়সীমা আরো ৩ মাস বাড়াতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রেরিত চিঠিতে মতামত পর্বে বলা হয়, আইন লংঘন করে চলতি দায়িত্ব পালনকারী সিইও এবং বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইডিআরএ কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না তা প্রতীয়মান। বরং নিয়ন্ত্রক আইডিআরএ’র এ ধরনের কার্যক্রম বীমা কোম্পানিগুলোর দুর্নীতিতে উৎসাহিত করছে। কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান কোম্পানি থেকে তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের অনুগত ব্যক্তিদের সিইও পদে নিয়োগ প্রদান করে থাকে। অনুগত ব্যক্তি যোগ্য না হলেও তার জন্য জরিমানা দিয়ে বছরের পর বছর সিইও পদে বহাল রাখা হয়। জরিমানার এ টাকা বীমা গ্রাহকের। ফলে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি বীমা খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।
নিয়ম বর্হিভূতভাবে দীর্ঘ সময় গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর শেখ রাকিবুল করিম সিইওর দায়িত্ব কেন প্রশ্নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম. আসলাম আলম অর্থকাগজকে বলেন, আমি দায়িত্বভার নেওয়ার পরই বিষয়টি তুলেছি। আগে বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলেনি কেউ।
আগেও কিছু বীমা কোম্পানিতে নিয়ম বর্হিভূতভাবে বেশ কজন প্রধান নির্বাহী বছরের পর পর চলতি দায়িত্বে ছিলেন। তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য চারটি বীমা কোম্পানি হলো জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। চতুর্থ প্রজন্মের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোতে কর্মরত সিইওরা বর্তমানে নিয়মিত এবং তরুণ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
এদিকে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার সময়কাল কমিয়ে বিদ্যমান আইনের সংশোধনী প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ●
অকা/বীখা/বিপ্র/ই/বিকেল/৭ জুলাই/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 months আগে