অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলমান গ্যাস সংকটে দেশের স্পিনিং উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ফেব্রিক আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তৈরি পোশাক খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন বা নিট রফতানি নেমে এসেছে মাত্র ৫৭ শতাংশে, যা গত সাত প্রান্তিক বা ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সর্বশেষ ২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এরচেয়ে কম ৫১ শতাংশ মূল্য সংযোজন বা নিট রপ্তানি দেখেছে এই খাত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট রফতানি ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি—৭২.২০ শতাংশ।
আগের প্রান্তিকের 'ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে' দেখানো তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনা করায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতে তুলা, সিনথেটিক/মিক্সড ইয়ার্ন, টেক্সটাইল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্ট অ্যাকসরিজসহ কাঁচামাল আমদানির খরচ ছিল ৩.৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৪৩ শতাংশ।
ফলে এ প্রান্তিকে খাতটির নিট রফতানি দাঁড়িয়েছে ৫.০৪ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের প্রান্তিকের (৫.৮৯ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। আর রফতানির এ পরিমাণ ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের (৫.৬১ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ১০ শতাংশ কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক থেকে মোট রফতানি আয় এসেছে ৮.৮৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের প্রান্তিকের (১১.৭৭ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ৩৬ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের (৮.৯৬ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ১.৩৮ শতাংশ কম।
নিট রফতানি কমার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যে রফতানি হয়েছে, তা মোটামুটি ঠিকই আছে।
'তবে জানুয়ারি-মার্চ সময়ের রফতানির তথ্য আমাদের কাছে সঠিক মনে হচ্ছে না। কারণ, আমাদের রফতানিকারকরা তখন এত বেশি রফতানি করেননি। ফলে নিট রফতানি যতটা কমেছে বলে দেখাচ্ছে, এত বেশি কমেছে বলে আমাদের মনে হয় না,' বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট রফতানি ৫০ শতাংশের আশেপাশে ছিল।
বিকেএমইএ সভাপতি আরও বলেন, আগামী মাসগুলিতে রফতানি আরও কমতে পারে।
তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত আরএমজি রফতানি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ, ইউরোপের উইন্টার, লেট উইন্টার ও লেট সামারে যেসব পণ্যের অর্ডার আমরা পেয়ে থাকি, দেশব্যাপী অস্থিরতা থাকায় গত তিন মাসে এসব অর্ডার আসা অনেক কমে গেছে। রফতানি অর্ডার কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রফতানিও আগামী কয়েক মাসে কমে যাবে।'
কাঁচামাল আমদানিও বাড়বে উল্লেখ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'গ্যাস সংকটের কারণে আমরা দেশে ফেব্রিক তৈরি করতে পারছি না।'
এছাড়া প্রণোদনা কমানোর ফলে সুতার মতো দেশীয় কাঁচামালের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 'ফলে আমাদের এসব জিনিস আমদানি করতে হবে এবং মোট আমদানি খরচ বাড়বে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভূরাজনৈতিক সংঘাতের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব থাকা সত্ত্বেও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তৈরি পোশাক খাত তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক চাহিদা কমায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পোশাক রফতানিও আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। এ প্রান্তিকে মোট রফতানি আয়ের ৩৮ শতাংশ ওভেন পোশাক থেকে এবং ৪৪ শতাংশ নিটওয়্যার থেকে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। এসব বাজার থেকে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৬.৯৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় এসেছে। তবে এই বাজারগুলোতে রফতানি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৬.৫৬ শতাংশ এবং আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২.৪৩ শতাংশ কমেছে।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করেছিল। 'তখনকার সময়ে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) তালিকা থেকে বাদ পড়ার কথা বলে এবং ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অনেক প্রণোদনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল,' বলেন তিনি।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'বর্তমান সরকারের এসব বিষয় পুনর্বিবেচনা করে সংশোধন করা উচিত। এছাড়া রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে।' ●
অকা/তৈপোশি/ই/ সকাল, ২৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

