তারেক আবেদীন ●
পর্বতসম দুর্নীতি ও অনিয়মে ডুবন্ত হোমল্যান্ড লাইফ পর্ষদকে জরুরি তলব করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ২০ ফেব্রুয়ারি অর্থকাগজ অনলাইনে ‘মালিকদের রেষারেষি চরমে ● হোমল্যান্ড লাইফে অচলাবস্থা’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কোম্পানির সৃষ্ট সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র অর্থকাগজকে জানায়, হোমল্যান্ড ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আব্দুল মতিনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের পর কোম্পানির পর্ষদে বিশৃংখলা নিরসনের জন্য আইডিআরএ এক পত্র কদিন আগে পাঠায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির চেয়ারম্যানকে পাঠানো সে পত্রে (স্মারক-৫৩.০৩.০০০০.০০০.০৩২.১১.০০০৮.২২.৪৪) ৪ মার্চ দুপুর ১২টায় কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে কোম্পানি পর্ষদের সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইডিআরএ’র পরিচালক (উপসচিব) আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত পত্রটি সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, কোম্পানিটিতে নিয়মিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নেই অনেকদিন ধরে। আইনগত কারণে নিয়মিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারছে না কোম্পানিটি। ফলে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কাজ করে আসছে। এক বছরে ৩ জন প্রধান নির্বাহীকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ আবদুল মতিন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এ ১২ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। ভূয়া শিক্ষা সনদধারী মোহাম্মদ আবদুল মতিন স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রাইম ইসলামী লাইফ থেকে এমডি হবার খায়েশে প্রথমে বেস্ট লাইফ পরে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ হয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এ যোগদান করে একের পর এক ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ড করতে শুরু করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মতিন এবং তার নিয়োগকৃত উপ ব্যবস্থাপনা পরচিালক লুৎফুন নাহার আলোর ভূয়া ব্যবসা এবং কোম্পানিতে জমাকৃত মোহাম্মদ আবদুল মতিনের শিক্ষা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) পদ থেকে মোহাম্মদ আবদুল মতিন ও আলোকে কোম্পানি থেকে অব্যাহতি দেন ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরন্সে কোম্পানী লিমিটেড এর সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুলহাস ও পরিচালক সালেহ হোসনের প্রশ্রয়ে বহিস্কৃত ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মতিন এবং উপ ব্যবস্থাপনা পরচিালক লুৎফুন নাহার আলো হোমল্যান্ড লাইফ ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ। অফিস করছেন নিয়মিতই। জিম্মি করে রেখেছেন কোম্পানির মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়টিকে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এক তথ্যে দেখা যায়, আইন অনুয়ায়ী ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড অতিরিক্ত মূলধন সংগ্রহর জন্য গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারে যাওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল। কিন্তু ২৬ বছরেও ব্যর্থ হয়েছে ১৯৯৬ সালে ২৩ মে নিবন্ধিত কোম্পানিটি।
কোম্পানিটির হিসাব বিভাগ থেকে প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা যায়, হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি তলানিতে। কোম্পানির ২০২৩ সালে ব্যবসা অর্জিত হয় ৬১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭২ টাকা। এ অংকের মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়েছিল ৪৩ কোটি ২৫ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫২ টাকা; বাকিটা নবায়ন ব্যবসা। কিন্তু তুলনামূলকভাবে কোম্পানিটির ব্যবসা ২০২৪ সালে বেশ শোচনীয়। সদ্য সমাপ্ত বছরে তা অর্ধেকেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে। উপাত্তে দেখা যায়, ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মোট ব্যবসা ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২ হাজার ২৫৪ টাকা। এরমধ্যে প্রথম বর্ষের ব্যবসার অংক ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬৬ টাকা। প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাহকের দাবীসহ বিভিন্ন পাওনা অপরিশোধিত, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বেতন ভাতা ও পাওনা বকেয়া রাখা, মালিকদের মধ্যে দলাদলি, ভূয়া বিল ও ভাউচার দেখিয়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে না যাওয়ার ব্যর্থতা, অবৈধভাবে জমি ক্রয়, মামলা মোকদ্দমায় জড়ানো, মূলধন ভেঙ্গে খেয়ে ফেলা, তহবিল তসরূপ, অর্থ কেলেংকারি, আইন ও বিধান না মানা, ঘনঘন উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পাল্টানো, যোগ্য ও শিক্ষিত নির্বাহীকে সরিয়ে অযোগ্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ, রাজনৈতিক প্রভাব প্রদর্শন ইত্যাদি কার্যক্রম উল্লেখিত কোম্পানিতে বেশ কবছর থেকে বিরাজমান। ফলে হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এ সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। গ্রাহক ও পাওনাদারগণ বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য দাবী ও পাওনা থেকে। কোম্পানির নির্বাহী কাজে বেশ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ●
অকা/জীবীকো/বিপ্র/সকাল/২ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 8 months আগে