অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন ২৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মূলত ডিসেম্বরে ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে সংস্থাটির একটি মিশন আসবে। সে মিশনের আগে প্রস্তুতিমূলক হিসেবে বর্তমান মিশনটি এসেছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাটির কাছে যে অতিরিক্ত সহায়তা চাওয়া হয়েছে, সেটিও মূল্যায়ন করে দেখবে বর্তমান দলটি। মিশনের প্রথম দিন ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফের পক্ষ থেকে সরকারের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তারা ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আইএমএফের কর্মকর্তারা সরকারের ব্যয় কমানোর তাগিদ দিয়েছেন। পাশাপাশি কর জিডিপির পরিমাণ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর কথা বলেছেন তারা। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতির বিষয়টি আইএমএফের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি অর্থ বছরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৮ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো প্রকল্প ব্যয় কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় কমানোর বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে।

আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকের পর অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ, ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কার ও পদক্ষেপের জন্য আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে আইএমএফের কাছে কী পরিমাণ সহায়তা চাওয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। অন্য দাতা সংস্থাগুলো কী পরিমাণ সহায়তা দেবে, সেটা জানার পর আইএমএফের কাছে সহায়তার পরিমাণ উল্লেখ করা হবে।’

বৈঠকের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা রকম সংস্কার ও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রিসোর্স দরকার। আমরা যতটুকু পারি দেশীয় সম্পদ আহরণ করব। কিন্তু কিছু জিনিস আছে বিদেশী সহায়তা লাগবে। এর মধ্যে অন্যতম আইএমএফ ব্যালান্স সাপোর্ট দেয়, যা ব্যাংকিং ও অন্যান্য সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা মিশন আসছে, আমাদের সম্ভাব্য কী কী দরকার। আমরা বলেছি সংস্কারের বিষয়ে মোটামুটি পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেক্টরে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের রিসোর্স গ্যাপ কী পরিমাণ লাগবে, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ওরা ডিটেইলসে আরো আলাপ করবে। আমার সঙ্গে নীতি ও মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসবে। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও ব্যাংক রিফর্ম নিয়ে কী করবে, সেটা জানবে। এনবিআরের সঙ্গেও বসবে। আমাদের ম্যাক্রো পলিসি টিম আছে। ডিটেইলস আলাপ করে তাদের নিজস্ব ভিউ দেবে। তারপর অক্টোবরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মিটিংয়ে যাব, সেখানে পলিসি মেকারদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তারপর প্রেজেন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে আলাপ হবে।’

তাদের কাছে কী চেয়েছেন জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘রিসোর্স, কারিগরি সহায়তা যেটা ব্যাংক সেক্টর রিফর্মের জন্য, মানি লন্ডারিংয়ের জন্য, ট্যাক্স রিফর্মের জন্য, ইনকাম ট্যাক্স-ভ্যাট রিফর্মের জন্য। শুধু আইএমএফ না, অন্যদের কাছেও কিছু চেয়েছি। কারা কী সাহায্য দেবে, সেটা কো-অর্ডিনেট করে আইএমএফকে আমরা স্পেসিফিক বলব ওদের কাছ থেকে আমাদের কী কী সাহায্য দরকার। ●

অকা/আখা/ফর/সকাল/২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

Leave A Reply

Exit mobile version