তারেক আবেদীন ●
স্বপ্ন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাব্বির হাসান নাসির বলেছেন, সুলভ মূল্যে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে যে কাজটি করছি তা হলো, মূল্য তদারকি ও এর পরিবর্তন প্রক্রিয়া। আমরা পরখ করে দেখি এই মুহূর্তে কোন পণ্যের দাম কতো! সেটা কোথা থেকে আনা হয়, কীভাবে আসে?। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে পণ্যে দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া, বারবার হাত বদলের কারণেও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। সে জন্যই আমরা মধ্যস্বত্বভোগীদের পরিহার করে কৃষকের কাছ থেকে হতে সরাসরি পণ্য ক্রয় করে থাকি যাতে পণ্যমূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে এনে কিছুটা কম মূল্যে বিক্রয় করলে ক্রেতা লাভবান হয়। আমরা চেষ্টা করি যাতে সহনীয় বা সুলভ মূল্যে ভোক্তার নিকট পণ্য পৌঁছে দেওয়া যায়। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই উৎপাদনে যাব এবং সে লক্ষ্যে ‘কন্টাক্ট ফার্মিয়ে’ যাচ্ছি। কেননা, সহনীয় মূল্যে ভোক্তাকে সেবা দিতে স্বপ্ন উৎপাদনে যাচ্ছে। মাছ, মুরগি ইত্যাদি যদি আমরা সরসরি উৎপাদন করতে পারি তবে ভোক্তার নিকট আমরা আরও সুলভ মূল্যে তুলে দিতে পারবো। তাছাড়া, বেশ কিছু প্রাইভেট দল আমরা তৈরি করছি যাতে ভোক্তার নিকট আরও সুলভ মূল্যে পণ্য তুলে দিতে পারি।
সুপার শপগুলোতে ব্রান্ড আইটেমেও ৫ শতাংশ মূসক অএ নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ দীর্ঘ সময়ের! এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভালো জানে। নীতি তো আমরা তৈরি করি না। নীতি এনবিআর বানিয়েছে। এ ব্যাপারে ভোক্তাদের অভিযোগ আমরা সময় সময় এনবিআরকে জানিয়েছি। আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। কোথা থেকেও এর কোনো সদুত্তর পাইনি যে, এটা পরিবর্তন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা বলেছি ভ্যাটের মূলনীতি হলো- যেটা ভ্যালু এডিশন হবে তার ওপর ১৫% ভ্যাট আরোপিত হবে। মূলতঃ আমরা যে মূল্যে পণ্য ক্রয় করি এবং বিক্রয় করি তার মধ্যে পার্থক্য থাকে মাত্র ১২% থেকে ১৩%। ১২% থেকে ১৩% এর ওপর যদি ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয় তবে ২% এর নিচে আসে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। ৫% ভ্যাট যেটা ফ্ল্যাট দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা পুরোপুরি অন্যায্য। যেহেতু সরকার এটি নির্ধারণ করেছে সেহেতু আমার তো কিছু বলার নেই। যেসব এলাকায় প্রাইস সেন্সসেটিভিটি বেশি সেসব এলাকায় আমরা ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা করে দেই। সেটাও এনবিআর এর পছন্দ না। এনবিআর এর পছন্দ হচ্ছে ক্রেতার নিকট হতেই ভ্যাট নিতে হবে। প্রথমতঃ ভ্যাট নীতির সঙ্গে এটা যায় না। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে- ছোটখাটো যেসব দোকান রয়েছে সেখানো তো ভ্যাট নেই, কেবল সুপার শপে ভ্যাট দিয়ে রেখেছে। এই দ্বৈতনীতি সেটাতো মানুষকে নিরুৎসাহিত করবে সুপার শপে কেনাকাটা করতে অথচ শুল্কটা আসে সুপার শপ থেকে। আপনি যেখান থেকে শুল্ক পান সেখানে প্রোমোট করবেন না ডিমোট করবেন? এক্ষেত্রে সরকারের নীতি হচ্ছে দ্বিমুখী। সরকার এমন ভুলনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের বিকাশমান সুপার শপগুলো অপরদিকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাবে সরকার। সরকার যদি পুরো সেক্টরের ওপর ভ্যাট আরোপ করতে পারে তবে প্রায় ৪ হাজার সাতশ’ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হবে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই বেসরকারি খাতের অবদান বেশি। যেমন- শ্রীলঙ্কায় ৪৩%, থাইল্যান্ডে ৫৭%, পশ্চিমা বিশে^ প্রায় ৯০% শতাংশের ওপরে। মডার্ন ট্রেড বা রিটেইল যেটা বলা হয় অর্থাৎ প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশ করতে হবে। তা না হলে ভোক্তা ফরমাল সেক্টর ছেড়ে ইনফরমাল সেক্টরে চলে যাবে। ফলে, রাজস্ব হারাবে সরকার। ম্যানুফ্যাকচার পণ্যের ওপর ভ্যাটসহ এমআরপি স্টিকার সংযুক্ত থাকার পরও পণ্য বিক্রয়কালীন ওই মূল্যের ওপর অতিরিক্ত ৫% ফ্ল্যাট ভ্যাট আরোপ করা হয়। পণ্য বিক্রয়কে একটি প্রক্রিয়া আখ্যা দিয়ে এনবিআর যে ৫% অনৈতিক ভ্যাট আরোপ করে যা ভোক্তদের বিবেচনায় অযৌক্তিক ও জুলুম। প্রতিবার হাত বদলে ভ্যাট আহরণের চিন্তা না করে পণ্যের সঙ্গে চাহিদামাফিক একবারেই ভ্যাট বসিয়ে নিলে শতভাগ ভ্যাট আহরণ সম্ভব। কারও নিকট থেকে ভ্যাট সংগ্রহ আবার কাউকে ভ্যাটের বাইরে রেখে এমন অসমান্তরাল কার্যকলাপে এনবিআরের লোকদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ যোগাবে। এ জাতীয় দ্বৈত নীতির পেছনে সূক্ষ্ম দুর্নীতর গন্ধ রয়েছে! এমন মাথামোটা চিন্তা থেকে এনবিআরের বের হয়ে আসা উচিত বলে সজ্জন ব্যক্তিবর্গ মনে করেন। আমরা ট্যারিফ কমিশনকেও এ ব্যাপারে চিঠি লিখেছি যাতে সেলস ভ্যাট বাদ দিয়ে ম্যানুফ্যাকচার ভ্যাট আরোপ করা হয়। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারক লভ্যাংশ, ভ্যাট ও আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্ধারণ করে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) ট্যাগ বসালে সরকারের রাজস্ব আহরণ আরও সহজ ও নিশ্চিত হবে এবং এটিই সঠিক পদ্ধতি বলে মনে করি। ●
অকা/পবা/আলাপন/বিকেল, ১০ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে