অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে পুরোনো এবং আদায়ের সম্ভাবনা কম এমন ঋণ অবলোপন (write-off) করতে পারবে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি, এসব ঋণ আদায়ে সফল কর্মকর্তারা পাবেন নগদ প্রণোদনা।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী ঋণ ব্যালান্সশিটে দেখানোয় ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন অপ্রয়োজনে ফুলে উঠছে। এতে প্রকৃত আর্থিক অবস্থার স্বচ্ছতা নষ্ট হচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসারে পুরোনো ও ক্ষতিগ্রস্ত মানের ঋণ অবলোপনের সুযোগ রাখা হয়েছে, যাতে ব্যাংকের বাস্তব আর্থিক চিত্র স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ অবলোপনের কমপক্ষে ৩০ কর্মদিবস আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
এছাড়া, অবলোপনের পরও যদি কোনো কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ঋণ আদায়ে ভূমিকা রাখেন, তাহলে ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী তাকে নগদ প্রণোদনা দেওয়া যাবে।
যেসব ব্যাংকের এ বিষয়ে নিজস্ব নীতি নেই, তাদেরকে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা (best practices) অনুসরণ ও ঋণ আদায় কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে এই নতুন প্রণোদনা নীতি চালু করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, কঠোর নজরদারি ও নিয়মনীতি প্রয়োগের ফলে ব্যাংক খাতের আসল খেলাপি ঋণের চিত্র এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক সুবিধায় যেসব ঋণ ‘নিয়মিত’ হিসেবে দেখানো হচ্ছিল, সেগুলো এখন ‘মন্দ ঋণ’-এ রূপ নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় ঋণ আদায় ত্বরান্বিত ও ব্যাংক খাতের আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নীতিমালাকে একটি কাঠামোগত সংস্কারের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/২০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 12 hours আগে