চৌধুরী মো. শাহেদ ●
দেশের তৃতীয় প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড ও বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। রাজধানীর মহাখালী এবং বিজয়নগরে অবস্থিত কোম্পানি দুটির প্রধান কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে তাদের কার্যক্রম অনেকটা নিষ্ক্রিয় দেখা যায়। বিজয়নগরের মাহতাব সেন্টারে বায়রা লাইফের প্রধান কার্যালয় মাঝেমধ্যে খোলা থাকলেও গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড এর ৯৯ মহাখালীস্থ এ্যামবন কমপেক্সস্থ অফিস রয়েছে তালাবদ্ধ। তবে বায়রা লাইফের প্রধান কার্যালয়ে পাওনাদারদের ভয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে ২০২৫ সালে কোম্পানি দুটির নিবন্ধন সনদ নবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ জন্য ৫ মার্চ কোম্পানি দুটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের কাছে আইডিআরএ’র পরিচালক (নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা, লাইফ) আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদাভাবে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (রায়রা) এর ২৫৩ সদস্য মিলে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড গঠন করে। কদিন পর কোম্পানিটি বীমা কার্যক্রম শুরু করে। অথচ প্রায় ২৫ বছরেও কোম্পানিটি সাফল্য দেখাতে পারেনি। কোম্পানির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র অর্থকাগজকে জানায়, সর্বশেষ হিসাব অনুয়ায়ী বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর কাছে গ্রাহক ও অন্যান্যদের পাওনা ৭০ কোটি টাকা। সম্পদ ও নগদ তহবিল মিলিয়ে কোম্পানির রয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। কোম্পানির নামে রাজধানীর মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে প্রায় ২২ কাঠার জমি রয়েছে যা সরকার অধিকৃত। এর বর্তমান বাজার মূল্য ৭৫-৭৭ কোটি টাকা। সরকার কোম্পানিকে জমিটি ছেড়ে দিলে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব বলে কোম্পানির হিসাব বিভাগ মনে করছে।
একই সময়ে বীমা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হয় তৃতীয় প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড। নামে সোনালী সুদিন। গোল্ডেন লাইফের চলছে বেশ দুর্দিন। গ্রাহকের পাওনা নিয়ে বছরের পর বছর ঘুরানো ও টালবাহানায় ভূক্তভোগীরা বেশ অর্থকষ্টের মধ্যে আছেন। পাওনা দিতে টালবাহানার জন্য কোম্পানির প্রধান কার্যালয় হামলার কবলে পড়ে। স্টাফদের মারধরও করা হয়। অনেকেই সম্মানের ভয়ে বেতন ও পাওনা না নিয়ে কোম্পানি ছেড়ে চলে গেছেন। কোম্পানির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ৪ মাস ধরে গোল্ডেন লাইফের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ বেতন পাচ্ছেন না। জানা গেছে, চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টার (সাবেক এমডি) একতরফা সিদ্ধান্তে কোম্পানিটি রসাতলে এমন অভিযোগ দীর্ঘ সময়ের। গোল্ডেন লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান একই সঙ্গে একটি নন লাইফ কোম্পানিরও চেয়ারম্যান তাও অনেকদিন ধরে। সূত্র জানায়, সর্বশেষ হিসাব অনুয়ায়ী গ্রাহক ও অন্যান্য পাওনাদার গোল্ডেন লাইফের কাছে পাবে ৩৪ কোটি টাকা; অথচ সম্পদ আছে মাত্র ২১ কোটি টাকার। এ সম্পদ মূল্যের মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে কোম্পানির কেনা ৫টি ফ্লোর এবং কুমিল্লাস্থ শপিংমলের স্পেস।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর একটি সূত্র জানায়, গ্রাহকদের স্বার্থে কোম্পানি দুটির অবস্থার পরিবর্তন না হলে গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড ও বায়রা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়া হবে। ●
অকা/জীবীকো/বিপ্র/সন্ধ্যা/১২ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 month আগে