অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাবের সংখ্যা নতুন রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে এ ধরনের হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি। তিন মাসের ব্যবধানে জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টিতে। অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪টি কোটিপতি হিসাব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই ব্যক্তিগত সম্পদশালী হওয়া নয়। অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, করপোরেট সংস্থা, এনজিও ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি জমা রাখে। তাছাড়া, একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা থাকতে পারে। ফলে বাস্তবে কোটিপতির সংখ্যা হিসাবের চেয়ে অনেক কম।

একই সময়ে ব্যাংক খাতে সামগ্রিক আমানতও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মার্চ শেষে সব হিসাব মিলিয়ে মোট আমানত ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা, যা জুন শেষে দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।

দেশে ব্যাংক হিসাবের মোট সংখ্যাও বেড়েছে। মার্চ শেষে যেখানে মোট হিসাব ছিল ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮২১টি, জুন শেষে তা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টিতে। অর্থাৎ নতুনভাবে প্রায় ৩২ লাখ ৯৫ হাজার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।

বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণও দ্রুত বাড়ছে। মার্চ শেষে এসব হিসাবে মোট আমানত ছিল ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকায়। মাত্র তিন মাসে এসব হিসাবে জমা বেড়েছে প্রায় ৯৭ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।

স্বাধীনতার পর ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাবের যাত্রা শুরু হয় খুবই সীমিত পরিসরে। ১৯৭২ সালে ছিল মাত্র ৫টি কোটি টাকার হিসাব। ১৯৭৫ সালে এই সংখ্যা হয় ৪৭টি, ১৯৮০ সালে ৯৮টি এবং ১৯৯০ সালে দাঁড়ায় ৯৪৩টিতে। এরপর ২০০১ সালে এই সংখ্যা হয় ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩টিতে। ২০২০ সালের শেষে তা পৌঁছে যায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। এরপর ক্রমান্বয়ে ২০২১ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬টি, ২০২২ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি, ২০২৩ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি এবং ২০২৪ সালের শেষে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৮১টিতে। সর্বশেষ ২০২৫ সালের জুন শেষে রেকর্ড সৃষ্টি করে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টিতে পৌঁছেছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাব বাড়ার বিষয়টি দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি, জনগণের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা এবং আমানত রাখার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিফলন।
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version