অর্থকাগজ প্রতিবেদন
দেশের চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে বস্ত্র খাতেও। তীব্র গরমের কারণে কারখানাগুলোয় শ্রমিকের উপস্থিতি কমে গেছে। ঈদের পর যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই দিনের চেয়ে রাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
গাজীপুরে অবস্থিত তৈরি পোশাকের কাঁচামাল উৎপাদনকারী একটি কারখানা। বস্ত্র শিল্পের এ কারখানায় তিন শিফটে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ঈদের ছুটি শেষ হলেও অনেক শ্রমিক এখনো কাজে ফেরেননি। কারখানার উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, তীব্র গরমের মধ্যে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নিলেও সব শিফটে সমান হারে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি থাকছে রাতের শিফটে।

বস্ত্র শিল্পোদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটির পর কাজে ফিরতে এবার তুলনামূলক বেশি দেরি করেছেন শ্রমিকরা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র গরম। অনেকে বাড়ি থেকে ফিরলেও কাজে যোগ দেয়ার আগ্রহ পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতি কেবল বস্ত্র শিল্পে নয়, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয়ও শ্রমিকের উপস্থিতি তুলনামূলক কম।

সূত্র জানায়, বস্ত্র শিল্পের কারখানায় সাধারণ তিন শিফটে কাজ হয়। প্রথম শিফট শুরু হয় ভোর ৬টায়; শেষ হয় বেলা ২টায়। বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় শিফট। আর তৃতীয় শিফট চলে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। বর্তমানে তৃতীয় শিফটে শ্রমিকের উপস্থিতি ও উৎপাদন তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘আমার কারখানার উৎপাদন এখন ৩০ শতাংশ কম শ্রমিক দিয়ে চালিয়ে নিতে হচ্ছে। প্রতিবারই ঈদের পর শ্রমিকের উপস্থিতি কম থাকে। এবারো ব্যতিক্রম নয়। তবে গরমের তীব্রতার কারণে উপস্থিতি আরো কমে গেছে। দেখা যাচ্ছে, রাতের শিফটে শ্রমিকের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি; ফলে উৎপাদনও রাতে বেশি।’

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারখানার আশপাশ এলাকায় থাকা শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত নয়। তীব্র গরমে এ ধরনের আবাসনে থাকতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। আবার তীব্র গরমের কারণে কাজের প্রতি শ্রমিকের আগ্রহে ব্যাঘাত ঘটছে।

বিটিএমএর সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি এখন তীব্র গরমের প্রভাব মোকাবেলা করছি কারখানায়। প্রায় ২০ শতাংশ শ্রমিক অনুপস্থিত রয়েছে কারখানায়। বর্তমানে তাপপ্রবাহের এ পরিস্থিতিতে তেমন কিছু করারও নেই।’

বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, ‘কারখানাগুলোয় শ্রমিকের উপস্থিতি কম। পোশাক কারখানায় ৫-৬ শতাংশ কম। টেক্সটাইলের স্পিনিং ও ডায়িং কারখানাগুলোয় শ্রমিকের অনুপস্থিতি আরো বেশি। যদিও ক্রয়াদেশ এখন মোটামুটি আছে। গরমের প্রভাবেই পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিকের উপস্থিতি ৫-৬ শতাংশ কম। এ পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোক এড়াতে কারখানাগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে গত ২ এপ্রিল কারখানাগুলোকে দিকনির্দেশনা দেয় বিজিএমইএ। বলা হয়, সম্প্রতি সারা দেশে তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। অতিমাত্রায় উষ্ণতার কারণে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা অসুস্থ হলে উৎপাদন বহুলাংশে ব্যাহত হবে।

হিট স্ট্রোক রোধে করণীয় হিসেবে বিজিএমইএ বলেছে, রোগীকে দ্রুত ঠাণ্ডা স্থানে নিয়ে বাতাস করা অথবা ফ্যানের নিচে রাখা; রোগীকে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দেয়ার পাশাপাশি কাপড়ে বরফ মুড়ে শরীর মোছা; ভেজা কাপড় দিয়ে ঘাড়, বগল ও কুঁচকি মুছে দেয়া; শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের শরবত পান করতে দেয়া; রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া; হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা; সূর্যের তাপ প্রখর থাকা অবস্থায় যতটা সম্ভব সরাসরি রৌদ্রে কম থাকা এবং ঘরের বাইরে গেলে ক্যাপ/স্কার্ফ ও ছাতা ব্যবহার করা।’ শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুর রহিম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান গরমের প্রেক্ষাপটে কারখানার ভেন্টিলেশনের বিষয়ে আমরা নজরদারি শুরু করেছি। আমাদের পরিদর্শনের ফোকাস এখন ভেন্টিলেশনে। বাতাসের প্রবাহ যথেষ্ট না হলে শ্রমিক অসুস্থ হয়ে সবাই বিপদগ্রস্ত হবে। এ কাজ আমরা এখন ভালোভাবে করছি।’

অকা/দবকউর/ফর/সকাল, ১ মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 2 years আগে

Leave A Reply

Exit mobile version