অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পতনের ধারা থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজি বাজার। ৩ মার্চ টানা চতুর্থ দিনের মতো দরপতনের শিকার ছিল দেশের দুই পুঁজি বাজার। ৩ মার্চও দিনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী বাজারগুলো শেষদিকে এসে বিক্রয়চাপে পড়ে। সর্বশেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের দুই পুঁজি বাজার সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এরপর টানা চার দিনে ৪৭ পয়েন্টের বেশি সূচক হারিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ হারায় প্রধান সূচকটির ১০০ পয়েন্টের বেশি।
৩ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬ দশমিক ১৮ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ২৩৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে ৫ হাজার ২২০ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে স্থির হয়। বাজারটির অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই-শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৫ দশমিক ১৬ ও ৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই সূচকের অবনতি ঘটে ২২ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। এখানে সিএসই-৩০ সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ২ দশমিক ৯৬ ও ৭ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতির প্রভাব ছিল দুই পুঁজি বাজারের লেনদেনেও। ৩ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৩৮১ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়, যা আগের দিন অপেক্ষা ৪০ কোটি টাকা কম। ২ মার্চ বাজারটির লেনদেন ছিল ৪২১ কোটি টাকা। এর কয়েক দিন আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারি ৬২৭ কোটি টাকা লেনদেন হয় এ বাজারে। লেনদেন কমেছে চট্টগ্রাম স্টকেও।
সূচক ও লেনদেনের ধারাবাহিক এ অবনতিকে পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টরা চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব হিসেবেই দেখছেন। তারা মনে করেন, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাতগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে যে অব্যবস্থা বিরাজ করছিল তা থেকে মুক্ত ছিল না পুঁজি বাজারও। আর্থিক খাতের এ অব্যবস্থাপনা ব্যাপক তারল্য সঙ্কট তৈরি করে। এ দিকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কারো হাতেই পর্যাপ্ত অর্থ নেই। অথচ তারল্য ছাড়া পুঁজি বাজার অচল। গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা থাকলেও তা চলমান তারল্য সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার মতো যথেষ্ট ছিল না। এর ফলে ধুঁকছে পুঁজি বাজারগুলো।
এ ছাড়া আগামী দিনগুলোর রাজনৈতিক ব্যবস্থা কোনদিকে মোড় নিতে পারে তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই নির্বাচনের মধ্যেমে রাজনৈতিক সরকার না আসা পর্যন্ত এ সঙ্কট উত্তরণের বড় কোনো সুযোগ দেখছেন না তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৩ মার্চ লেনদেনের শুরুটা ছিল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। সকালে ৫ হাজার ২৩৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে প্রথম দিকে সূচকটি ৫ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে উঠে যায়। তবে এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেশিক্ষণ টেকেনি। সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিক্রয়চাপ শুরু হলে নিম্নমুখী হয়ে ওঠে বাজার সূচক। মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য বিক্রয়চাপ হ্রাস পেলেও শেষদিকে এসে তা আরো বেড়ে যায়। এতে দিনশেষে সূচকের ১০ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট হারায় বাজারটি।
দিনের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় আগের দিন দরপতনের শিকার কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ গতকাল আবার মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নেয়। দুই পুঁজি বাজারেই এ প্রবণতা দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকস। ঢাকা শেয়ার বাজারে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে দিনের শীর্ষে ছিল এটি। দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে জেমিনি ফুড, ফু ওয়াং ফুড, দেশবন্ধু পলিমার, ইস্টার্ণ ক্যাবলস, ন্যাশনাল পলিমার, ডেসকো ও আলহাজ টেক্সটাইলস।
অপর দিকে দিনের দরপতনের শীর্ষে ছিল সুরিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে স্টাইল ক্রাফট ৫.১০, আরামিট সিমেন্ট ৫.০৬ ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৫ দশমিক ০২ শতাংশ দরপতন ঘঠে। ডিএসইর দরপতনে শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে জাহিন স্পিনিং, ইন্টারনেট সার্ভিস নেটওয়ার্ক, বিডি অটোকার, লিগেসী ফুটওয়্যার ও মিথুন নিটিং।
ঢাকায় ৩ মার্চ ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৯৪টি হাওলায় ১৪ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয় যার বাাজরমূল্য ছিল ৩৮১ কোটি টাকা। মোট লেনদেন হওয়া কোম্পানি ছিল ৩৯৬টি। এর মধ্যে ৯৮টির দাম বাড়ে, ২৩০টির দাম কমে এবং ৬৮টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টকে লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২১৫টি। এখানে ৬১টির দাম বাড়ে, ১১১টির কমে এবং ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 9 months আগে

