অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আবারো হোঁচট খেল পুঁজি বাজার। আগের সপ্তাহে বেশ ক’দিন সংশোধনে কাটলেও সপ্তাহের শেষদিন ইতিবাচক ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দেয় দেশের পুঁজি বাজারগুলো। ওই দিন বাজারগুলো হারানো সূচকের একটি অংশ ফিরে পায়। বিনিয়োগকারীরা যখন সংশোধন শেষ করে ইতিবাচক বাজার আচরণের অপেক্ষায় তখন আবার নতুন করে হোঁচট খায় পুঁজি বাজারগুলো। ১৪ সেপ্টেম্বর পুঁজি বাজারগুলো সূচকের উন্নতি দিয়ে শুরু করলেও দিনশেষে বড় ধরনের সূচক হারায়। লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগ দর পতনের শিকার হয়েছে।

পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এ মুহূর্তে বাজারে নেতিবাচক কোনো বার্তা নেই, যার কারণে বড় ধরনের পতন ঘটতে পারে। বাজারের চলমান মূল্যস্তর বিবেচনায় নিয়ে বাজার থেকে মুনাফা তুলে নেয়ার ফলেই বিক্রয়চাপের শিকার হচ্ছে বাজার এমনটিই মনে করেন তারা। বাজারের নেতৃস্থানীয় একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, পুঁজি বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার পর বেশ কিছুদিন পার হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখনো আগের সেই ভয় কাজ করছে। এ মুহূর্তে বিভিন্ন আলোচনায় ব্যাংকগুলোর তারল্যসঙ্কটের বিষয়টিও উঠে আসছে। ফলে এখনো বাজার নিয়ে পুরোপুরি আস্থাশীল হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের বদলে ট্রেডিংয়ের দিকেই বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেশি। বাজারের মূল্যস্তর বাড়লেই তা থেকে মুনাফা তুলে নেয়াকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন। ফলে বাজারে সংশোধন ঘটছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪ সেপ্টেম্বর ৫৫ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট অবনতি ঘটে। ৫ হাজার ৫২৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি রোববার দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৪৬৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। শুরুর প্রথম এক ঘণ্টা বাজারটি সূচকের উন্নতি ধরে রাখলেও পরবর্তী সময়ে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হলে পাল্টে যায় বাজার আচরণ। দিনের বাকি সময় আর এ চাপ সামলে উঠতে পারেনি বাজারটি। এ সময় ডিএসইর বিশেষায়িত দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ২২ দশমিক ০৩ ও ১০ দশমিক ৯০ পয়েন্ট।

দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ১৪ সেপ্টেম্বর ১৬২ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট হারায়। ১৫ হাজার ৫১৯ দশমিক ০৩ পয়েন্ট থেকে সকালে লেনদেন শুরু করলেও দিনশেষে সূচকটি নেমে আসে ১৫ হাজার ৩৫৬ দশমিক ২৬ পয়েন্টে। এ সময় বাজারটি অপর দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ২০৮ দশমিক ৬০ ও ১০৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট।

এ দিকে সূচকের অবনতির প্রভাব ছিল পুঁজি বাজারগুলোর লেনদেনে। ঢাকায় লেনদেনের শুরুতে বাজারে কিছুটা গতি থাকলেও বিক্রয়চাপ শুরু হওয়ার পর তা হ্রাস পায়। প্রথম এক ঘণ্টায় ডিএসইর লেনদেন ২০০ কোটি টাকা ছাড়ালেও পরবর্তী সময়ে এ গতি আর থাকেনি। এ দিন ডিএসই ৭৩২ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ৪৬ কোটি টাকা কম। ১১ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৭৭৮ কোটি টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে আগের দিনের ১২ কোটিতেই স্থির ছিল লেনদেন।

১৪ সেপ্টেম্বর দুই পুঁজি বাজারে সব খাতই দরপতনের শিকার ছিল। সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকমিউনিকেশন ও প্রকৌশল খাত। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি টেলিকমিউনিকেশন খাতের বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর দরপতনই সূচকের বড় পতন ঘটায়। অপর দিকে কিছুটা ভালো অবস্থানে ছিল টেক্সটাইল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ দিন ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৬৭টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ২৭৫টি। অপরিবর্তিত ছিল ৫৬টি সিকিউরিটিজের দর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে লেনদেন হওয়া ২০৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে ৬১টির দাম বাড়লেও কমেছে ১২৭টির। এখানে অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির দর।

ঢাকায় ১৪ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল টেলিকমিউনিকেশন খাতের রবি অজিয়াটা। ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৮০ লাখ ১৩ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ১৪ সেপ্টেম্বর। ২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকয় এক কোটি ২৮ লাখ ৫৪ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে দিনের দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল একমি পেস্টিসাইডস। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ডমিনেজ স্টিলস, সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট, শাইন পুকুর সিরামিকস, আইপিডিসি ফিন্যান্স, সিটি ব্যাংক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ও লাভেলো আইসক্রিম।

ডিএসইতে দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে প্রকৌশল খাতের এস আলম কোল্ড রোল স্টিলস। ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটা দেশবন্ধু পলিমার ছিল মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে একমি পেস্টিসাইডস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইলস, আলহাজ টেক্সটাইলস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড, বসুন্ধরা পেপার মিলস ও এস্কয়্যার স্পিনিং অ্যন্ড নিটিং মিলস।

১৪ সেপ্টেম্বর ডিএসইর দরপতনের শীর্ষে ছিল স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক। এ দিন ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ দর হারায় ব্যাংকিং খাতের এ কোম্পানি। ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ দর হারিয়ে তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল ডমিনেজ স্টিলস। ১৪ সেপ্টেম্বর দরপতনে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইনফরমেশন সিস্টেমস নেটওয়ার্ক, বিবিএস ক্যাবলস, ইনটেক অনলাইন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ফিন্যান্স ও ফার্স্ট ফিন্যান্স। ●

অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version