অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের পুঁজি বাজারের উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাথে কাজ করবে ব্যবসায়ী ঢাকার ও শিল্পমালিকদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ও পরিচালনা পর্ষদের সাথে বৈঠক করেছেন। গুলশানের ডিসিসিআই অফিসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দেশের পুঁজি বাজারের উন্নয়ন, এসএমই কোম্পানি তালিকাভুক্তকরণ, পুঁজি বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো, নতুন আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন এবং স্টার্টআপ ও ুদ্র-মাঝারি শিল্পে অর্থায়ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ডিএসইর পক্ষ থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিজ কার্যালয়ে ঢাকা চেম্বার প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ডিএসইর প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে পুঁজি বাজার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, যে সব কোম্পানি পুঁজি বাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করেছে তাদের সাথে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরণ করতে হবে। আমাদের মতো দেশগুলোর অথবা আমাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে তুলনা করে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপি রেশিও এখনো ২০ শতাংশের নিচে। আমাদের মতো অর্থনীতির অনেক দেশে এটি অনেক ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি। তাই বাজারের গভীরতা বাড়াতে পুঁজিবাজারে এসএমই খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজি বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। এ জন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্বৈত কর ব্যবস্থা প্রত্যাহার ও এর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এসএমই কোম্পানিগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। এসএমই কোম্পানিগুলোর অর্থায়নের উপর বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে আরজেএসসিতে দুই লাখের বেশি কোম্পানি রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ৩৬০টি কোম্পানি পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া তিনি সরকারি কোম্পানি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজি বাজার দেশের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত হতে পারেনি। কিন্তু আশার বিষয় হলোÑ এই সরকার প্রথমবারের মতো পুঁজি বাজারের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামানকে পুঁজি বাজার বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে পুঁজি বাজারবান্ধব বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টার্নওভারের উপর এআইটি কমানো, মার্চেন্ট ব্যাংকের ট্যাক্স কমানো, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট ট্যাক্সের ব্যবধান বাড়ানো। এ ছাড়া পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) কিছু উদ্যোগ নিয়েছে যার মধ্যে রয়েছেÑ সিসি অ্যাকাউন্টের ইন্টারেস্ট বিষয়ে সমাধান ও বিও অ্যাকাউন্টের নবায়ন ফি কমানো। মার্কেটে শৃঙ্খলা আনার জন্য বিএসইসি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সক্রিয়।

ডিএসই প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, একটি দ, স্বচ্ছ এবং ন্যায়ভিত্তিক পুঁজি বাজারের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশের পুঁজি বাজার এখন একটি সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ডিএসই পুঁজি বাজারের কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে, এই উন্নয়নের রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিগত দিনে মার্কেটে রেগুলেটর অনেক সময় অযৌক্তিক হস্তপে করেছে। এখন পুঁজি বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন এবং একই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হচ্ছেন। বর্তমানে ইক্যুইটি মার্কেটের সাথে বন্ড মার্কেটকে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এই বিষয়ে ডিসিসিআইর সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিসিসিআই ক্যাপিটাল মার্কেটের একটি বড় স্টেকহোল্ডার।

মোমিনুল ইসলাম আরো বলেন, আইপিও প্রসেসের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া এখন চলমান। এ ছাড়া ভালো কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার জন্য গ্রিন চ্যানেল করার চেষ্টা চলছে। বিএসইসি বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিএসই ও ডিসিসিআই উভয় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পুঁজি বাজারকে আরো শক্তিশালী ও টেকসই করার ল্েয সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে পুঁজি বাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রাখতে পারে। এরই ল্েয স্বল্প সময়ের মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের (এটিবি) সুবিধা ও তালিকাভুক্তি নিয়ে চেম্বার সদস্যদের সাথে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে তিনি মত দেন।

ডিসিসিআই ও ডিএসই প্রেসিডেন্ট ছাড়াও আলোচনা সভার অন্যান্য বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি সহজ করা সম্ভব। এ ছাড়া এসএমই একটি বিশাল খাত। বেসরকারি খাতের প্রায় ৭৫ শতাংশই এসএমই। তাদের এক্সপোজার আছে, সংযোগ আছে, উন্নয়নের জায়গা আছে। তাই সরকার এ ব্যাপারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নিতে পারে তা বিবেচনায় আনতে পারে। ২০০৯ সালে, একটি সমীা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে উল্লেখ ছিল দেশে ৭.৫ মিলিয়ন ুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। আমরা মনে করি যে, এই অর্থনৈতিক ইউনিট থেকে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগের জন্য পুঁজি বাজারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিব এইচ চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: সেলিম সোলাইমান, জেনারেল সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম আসুদুজ্জামান পাটোয়ারি, পরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মো: শাকিল রিজভী, ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ দিকে ১৭ সেপ্টেম্বর দিনের শুরু থেকে উপর্যুপরি বিক্রয়চাপে এক প্রকার অস্থির ছিল দেশের উভয় পুঁজি বাজার। দেশের দুই বাজারে ১৭ সেপ্টেম্বর সবগুলো সূচকেরই কমবেশি অবনতি ঘটেছে। সূচকের উন্নতি দিয়ে দিন শুরু হলেও এক ঘণ্টার বেশি তা টিকেনি। বেলা ১১টা থেকে দুই বাজারেই শুরু হয় বিক্রয়চাপ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। বাজারটির বিশেষায়িত দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৭ দশমিক ৩১ ও ২ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ১৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। সিএসইর বিশেষায়িত দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৩৭ ও ১২ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।

সূচকের উন্নতির মধ্যেও ১৭ সেপ্টেম্বর লেনদেন বেড়েছে দুই শেয়ার বাজারেই। ঢাকা শেয়ার বাজার ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৩৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ৬৩ কোটি টাকা বেশি। ১৬ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৬৭৪ কোটি টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর বাজারটির লেনদেন ছিল ১১ কোটি টাকা। ●

অকা/পুঁবা/ফর/রাত/১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 5 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version