অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি রফতানির লক্ষ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করা হয় ১০৪ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ও ছয়টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অধীনে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান উপযোগী ৫৫টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরেই প্রশিক্ষিত করা হয়েছে পৌনে ১২ লাখের বেশি কর্মীকে। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, সংশ্লিষ্ট কাজে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী।
বিএমইটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ২৬ হাজার ৬০ কর্মী। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৮ জন অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ কর্মীই গেছেন অদক্ষ হিসেবে। স্বল্প দক্ষ কর্মী গেছেন ২৫ হাজার আর দক্ষতা নিয়ে গেছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৯০ জন। অথচ এ সময় দেশের সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজিগুলোয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৭ কর্মীকে।
নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের হার এত বেশি হওয়ার কথা না। তবে এজেন্সিগুলোর নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে তারা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে ওয়েল্ডিং, গ্যাস কাটিং, পেইন্টার এসব কাজ জানা লোকজনকে এজেন্সি থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয়। এর জন্য তারা ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব বেশি না।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত অর্থ বছরে যে পরিমাণ কর্মী বিদেশ গেছেন তার চেয়েও বেশি লোককে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি রফতানির লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকারি ১১০ টিটিসি ও আইএমটি কাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভস প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ‘সরকারি যেসব টিটিসি রয়েছে সেখানে বছরে কতজন প্রশিক্ষণ পেল আর কতজন বিদেশ গেল এবং তারা কোথায় কাজ করছে এসব মূল্যায়ন করা উচিত। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় সনদ অর্জনের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনে জোর দেয়া উচিত। অনেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যেতে রাজি কিন্তু ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ নিতে রাজি না। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর অন্তত তিন মাস দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ থাকা উচিত।’
বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি অদক্ষ লোক বিদেশ যায় মন্তব্য করে শরিফুল হাসান বলেন, ‘জাতিগতভাবেই আমাদের দক্ষতা অর্জনের প্রতি আগ্রহ কম। বেশির ভাগই শুধু সার্টিফিকেট চায় কিন্তু এটা তো কাজের না। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো জায়গায়ই যদি প্রশিক্ষণ নেয়া যায় তাহলে দক্ষতা বাড়ে, অভিবাসন খরচ কমে এবং দেশেরও মর্যাদা বাড়ে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি দক্ষতা অর্জনের জন্য যে আগ্রহ তৈরি করা দরকার সেটা হচ্ছে না। আমাদের দেশে এজন্য অভিবাসন খরচও বেশি। কর্মীরা যদি দক্ষ হতো তাহলে খরচ কমে আসত।’
বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালে মোট দক্ষ অভিবাসীর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বিদেশ যাওয়ার আগে নির্মাণ সম্পর্কিত কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়া ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক বিষয়ে ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বিষয়ে ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং বিদেশী ভাষায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ অভিবাসী। অভিবাসীদের মধ্যে যারা বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ-সংশ্লিষ্ট কাজেই নিয়োজিত হন তাদের সর্বোচ্চ ২২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ নির্মাণ সম্পর্কিত ফিল্ডেই কাজ করছেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক ফিল্ডে ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ এবং হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে কাজ করছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বিবিএসের পরিসংখ্যানটির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এটি দেখে তারপর বলতে পারব। তার আগে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। ●
অকা/শ্রবা/ফর/সকাল/২২ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে
