অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব, ওমান, আরব আমিরাত, কাতার, মালয়েশিয়ার পরই অন্যতম শ্রমবাজার হচ্ছে লিবিয়া। দীর্ঘদিন ধরে বৈধপথে দেশটিতে শ্রমিক যাওয়া বন্ধ রয়েছে। যদিও দেশটির তেলসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে ভালো বেতনে প্রচুর দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে।

গাদ্দাফির নির্মম পতনের পর লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় খুন খারাবি, ডাকাতি, রাহাজানি। তবে সেটি সাম্প্রতিক সময়ে কাটতে শুরু করেছে।

আমিরাতের দুবাই হয়ে অবৈধভাবে লিবিয়ায় পাড়ি জমানো লোকদের বেনগাজির মিলিশিয়া চক্রগুলো জিম্মি করে বিচ্ছিন্নভাবে মুক্তিপণ আদায়ের বাণিজ্য করছে। এটা সঠিক। কিন্তু সেই এলাকা খুবই ছোট্ট। এর ফলে বাংলাদেশের বৈধ অভিবাসন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দেশটিতে দু’টি প্রশাসন বিদ্যমান। একটি ত্রিপোলির অপরটি বেনগাজির। যদিও অবৈধ অভিবাসন বন্ধে ত্রিপোলির সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কিভাবে বৈধভাবে শ্রমিক নেয়া যায় সেটিসহ শ্রমসংক্রান্ত নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য লিবিয়ার ত্রিপোলিতে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়।

আরবি ভাষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের পরিচালক ড. এম মুফতাহ আবদুল্লাহ আল কাদী স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘সালামের পর ১৫ অক্টোবরের এক পত্রের পাশাপাশি ত্রিপোলিতে শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, সভার তারিখ পরিবর্তন করে ৩ নভেম্বর করা হয়েছে।

২৮ অক্টোবর ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয় আমাদের রাষ্ট্রদূতকে ৩ নভেম্বর যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত এখন ঢাকায় আছেন। তিনি ৩১ অক্টোবর লিবিয়ায় আসবেন।

দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বৈধভাবে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে ২০০৭ সালের পর আবারো ২০২৩ সালে নতুন করে এমওইউ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির এক জায়গায় অবৈধপথে অভিবাসন বন্ধ করে বৈধপথে শ্রমিক আনার কথা বলা হয়। কিন্তু এমওইউ চুক্তির পরও বৈধভাবে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার কার্যক্রম দুই দেশ শুরু করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে অনেক বাংলাদেশী দুবাই হয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার পর পরই কিডন্যাপকারী চক্রের হাতে জিম্মি হচ্ছে। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে তারা মুক্তি পাচ্ছেন। এখনো জিম্মি অবস্থায় ৩০০ বাংলাদেশী লিবিয়ার জেলে আছেন বলে দূতাবাসের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে।

২৮ অক্টোবর একাধিক জনশক্তি ব্যবসায়ী বলেন, আমরা অবৈধ অভিবাসন বন্ধের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি। এটি বন্ধ হলে বৈধ অভিবাসনে আর কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে ১ অক্টোবর থেকে লিবিয়াগামীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ রয়েছে। তারা বলেন, লিবিয়াতে প্রচুর শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে, বেতনও ভালো। কিন্তু সেদিকে আমাদের মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে না। আমরা চাই, বাংলাদেশের সাথে লিবিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো থাকুক। এতে দুই দেশ লাভবান হবে।

সম্প্রতি লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশীদের অপহরণ করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে। আইওএমের সহযোগিতায় সেখানে আটকে পড়া ২৬৫০ জন অবৈধ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের লক্ষ্য সাময়িকভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু না করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এস এফ গ্লোবালের মালিক হাওলাদার ফোরকান উদ্দিন দু’দিন আগে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আওয়ামী ফ্যাসিবাদীর প্রেতাত্মা। শ্রমবাজার কিভাবে সঙ্কুচিত হবে তিনি সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি দাবি করে বলেন, পতিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা সচিব রুহুল আমিনকে এই মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত না সরানো হলে শ্রম বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সচিব ওভার টেলিফোনে বহির্গমন বন্ধ রাখতে দূতাবাসকে এমন চিঠি দিতে বলেছেন। দূতাবাস সেভাবেই দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। নতুবা ই-ভিসা চালুর পর কী কারণে বহির্গমন ছাড়পত্র বন্ধ রাখার চিঠি ইস্যু হয় তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এটা অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকল।

এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ২৮ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। ●

অকা/শ্রবা/ফর/রাত/২৮ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

Leave A Reply

Exit mobile version