অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের পুঁজি বাজার ফের পেছন দিকে চলা শুরু করেছে, নাকি নতুন করে মন্দার শিকার হতে যাচ্ছে পুঁজি বাজার। এ মুহূর্তে পুঁজি বাজারের বিনিয়োগকারীদের মনে এ ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘ মন্দার পর পুঁজি বাজারগুলোতে গতি ফিরে আসায় বিনিয়োগকারীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তা বেশিদিন টেকেনি। কিছুদিন থেকে প্রায় প্রতিদিনই অবনতি ঘটে চলেছে লেনদেন ও সূচকের। অথচ দেশের আর্থিক খাতগুলো এখন আগের চাইতে অনেকটা গোছানোর দিকে আগাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিজার্ভ বাড়ছে। রফতানি খাতের সমস্যাও এখন অনেকটা কাটিয়ে ওঠেছে। কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্কট থাকলেও অন্যগুলো গত অর্থবছর শেষে ভালো মুনাফা করেছে। কিন্তু এর মধ্যেও পঁুঁজি বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে না।
১৫ সেপ্টেম্বর মতিঝিলে অবস্থিত ডিএসইর বিভিন্ন ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ট্রেডিং ফোরগুলোতে বিনিয়োগকারীদের সাথে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললে তারা তাদের এ ধরনের হতাশার কথা জানান। এতদিন তারা বাজারের চলমান আচরণকে সংশোধন হিসেবে দেখলেও কয়েকদিন ধরে লেনদেনের যে অবনতি ঘটছে তাতে নতুন করে শঙ্কিত বলে জানান। তারা মনে করেন, বরাবরের মতো এবারো হাতেগোনা কিছু স্বল্প মূলধনের কোম্পানি নিয়ে বাজারে এক ধরনের খেলা চললেও সার্বিক বাজার পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে চলেছে যা বাজারকে অস্বাভাবিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা ডিএসই কর্তৃপক্ষ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। তারা মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজি বাজার কর্তৃপক্ষকে এসব কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে দায়িত্ব শেষ না করে বরং এগুলোর পেছনে কারা সক্রিয় তা বের করতে হবে। কারণ এটি সার্বিক বাজার আচরণকে অস্বাভাবিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাজারে তৈরি হচ্ছে হতাশা। সত্যিকার বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন।
তারা মনে করেন, দুই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের উচিত, সাম্প্রতিক সময়ে যে সব কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে সেসব কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম ও আর্থিক অবস্থা সরেজমিন তদন্ত করা। কেন এসব কোম্পানির শেয়ার দর দু’মাসে ২০০ শতাংশের বেশি বাড়বে?
এদিকে পুঁজি বাজারের উন্নয়ন ও এর গভীরতা বাড়াতে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বন্ড মার্কেট গঠনে যৌথ উদ্যোগে একটি প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়, ১১ সেপ্টেম্বর পুঁজি বাজার উন্নয়নের ল্েয অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি ‘Bond market development in Bangladesh : challenges and policy recommendation’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সভাপতিত্ব করেন এবং ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প থেকে ডেপুটি গভর্নর ড. মো: হাবিবুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী, গভর্নরের উপদেষ্টা মো: আহসান উল্লাহসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় করণীয় নিয়েও বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়। যৌথ কমিটির প থেকে এ সময় কিছু নীতিগত সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এসব সুপারিশ অনুযায়ী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে এ সময় আলোচনা হয়।
এ ছাড়াও জাতীয় পরিসরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আইডিআরএ, বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এ সংক্রান্ত একটি সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের েেত্র বন্ড মার্কেট ও পুঁজি বাজারকে ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার ও প্রসার করার বিষয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়।
পুঁজি বাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টি এ সময় আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের বিষয়টি অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে চলতি বছরের ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজারের সঠিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং উন্নয়নে করণীয় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা প্রদান করেন যার মধ্যে ‘দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের েেত্র ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করে, সে ল্েয প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক নির্দেশনা অন্যতম।
প্রধান উপদেষ্টার দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে পুঁজি বাজারের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে কার্যক্রম শুরু করেছে।
জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে সমন্বিত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে পুঁজি বাজারকে পরিপূর্ণরূপে বিকশিত করে দেশের পুঁজি বাজারের সাথে সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করে পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ●
অকা/পুঁবা/ফর/সন্ধ্যা/১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 day আগে