অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি শক্ত অবস্থানে থাকলেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ দীর্ঘদিন ধরেই মন্থর। বাজারের অনিশ্চয়তা, উৎপাদন ব্যয়ের চাপ এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা ব্যবসাগুলোর ঋণগ্রহণের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আমানত–ঋণ প্রবৃদ্ধির এই ব্যবধান সামগ্রিক অর্থনীতির চাহিদা দুর্বল হয়ে থাকার ইঙ্গিত দেয়।

ইতিবাচক দিক হলো খাদ্যমূল্যের চাপ কমায় সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি অবশেষে একক অঙ্কে নেমেছে। তবে অন্যদিকে, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—যা আর্থিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাকে আরও স্পষ্ট করে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত নভেম্বর মাসের ইকনোমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি খাতে অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে, যদিও মাঝারি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত কমার পেছনে খাদ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা, সরবরাহ শৃঙ্খলের উন্নতি এবং আমদানি ব্যয় কমে যাওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.১৭ শতাংশে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ১০.৮৭ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৬৬ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.০৮ শতাংশে। তবে খাদ্য-বহির্ভূত মুদ্রাস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৯.১৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আবাসন, পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ওপর চাপের প্রতিফলন।

খাদ্য খাতে পরিবর্তনও স্পষ্ট। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে চালের দাম তীব্র বৃদ্ধি পেলেও নতুন আমন ফসল বাজারে আসা, সরকারি ক্রয় এবং আমদানি বৃদ্ধির ফলে মজুদ বাড়ে ও বাজারে স্থিতি আসে। ফলে চালের মূল্যস্ফীতি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি প্রায় ১৬ শতাংশ থেকে অক্টোবরে কমে ১৩.৭৭ শতাংশে নেমে আসে। মাঝারি, মিহি ও মোটা চাল—সব ধরনের চালেই একই ধারা দেখা গেছে।

প্রতিবেদন জানায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতির কাঠামোয় চাল ও মাছ এখনও প্রধান ভূমিকা রাখছে। অক্টোবর মাসে মোট খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭.০১ শতাংশ, মাছের ৩৯.৩৩ শতাংশ এবং মাংসের ১৩.৪৪ শতাংশ। সবজির তুলনামূলক নিম্নমূল্য সামগ্রিক মূল্যচাপ কমাতে সহায়তা করেছে।
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/২ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 6 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version