অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

বাংলাদেশ ব্যাংক পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন জমার শর্ত শিথিল করার পর এবার ৯০ দিনের মেয়াদে বাকিতে রোজার প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, মোটর, মসলা এবং খেজুরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এই সংক্রান্ত নির্দেশনা সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে পাঠিয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, আসন্ন রমজান মাসে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ৯০ দিনের বাকিতে এসব পণ্য আমদানির বিশেষ সুযোগ দেওয়া হলো। এই সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ, বিদেশি সরবরাহকারীর কাছ থেকে ঐ সময়ের মধ্যে আমদানিকারকরা ঋণ পরিশোধ না করেই পণ্য দেশে আনতে পারবেন। তবে অন্যান্য নির্দেশনা, যেমন প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ডকুমেন্টেশনের শর্ত, বহাল থাকবে।

এর আগে ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি নির্দেশনায় একই পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি, স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসব খাদ্যপণ্যের এলসি স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এলসি বা Letter of Credit খোলার সময় আমদানিকারককে ব্যাংকের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ জামানত হিসেবে রাখতে হয়, একে এলসি মার্জিন বলা হয়। সাধারণত এই হার ৫–১০ শতাংশের মধ্যে থাকে, যা ব্যাংক গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতা ও লেনদেন ইতিহাসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করে। পণ্য দেশে পৌঁছানোর পর প্রক্রিয়া শেষে বাকি অর্থ পরিশোধ করে আমদানিকারক পণ্য খালাস নেন।

তবে ২০২২ সালে ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করলে, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ ব্যতীত অন্যান্য পণ্যে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত এলসি মার্জিন বাধ্যতামূলক করে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় বিলাসপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, কিন্তু প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়।

বর্তমানে ডলার সংকট কিছুটা কমে আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে ধীরে এই কঠোর শর্তগুলো শিথিল করছে। এবার রমজানকে সামনে রেখে ৯০ দিনের বাকিতে খাদ্যপণ্য আমদানির সুযোগ এবং নগদ মার্জিন কমানোর উদ্যোগ বাজারে মূল্যচাপ কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের সাময়িক শিথিলতা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং সাধারণ ভোক্তারা রমজান মাসে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তবে তারা সতর্ক করেছেন, ব্যাংকগুলোর উচিত হবে শুধুমাত্র প্রকৃত আমদানিকারকদের কাছে এই সুবিধা সীমিত রাখা, যাতে সুযোগ নিয়ে কেউ অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বা মুদ্রা পাচার করতে না পারে।
অকা/প্র/ই/সকাল/১৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 4 weeks আগে

Leave A Reply

Exit mobile version