অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সারাদেশে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে সবজির দাম। মাঠপর্যায়ে উৎপাদন বাড়ায় সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে সবজির দাম চোখে পড়ার মতো কমেছে। এতে দীর্ঘদিন পর কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজি ও নতুন আলুর দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। বিক্রেতারা জানান, শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ায় গ্রাম থেকে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ সবজি আসছে। পরিবহন সংকট না থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থাও তুলনামূলক স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে দাম কমছে এবং সামনে আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
পেঁয়াজের বাজারে আংশিক স্বস্তি মিললেও পুরনো পেঁয়াজের দাম এখনো তুলনামূলক বেশি। তবে নতুন মুড়িকাটা দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগের তুলনায় পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যা বাজারে বড় ধরনের স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শীতকালীন সবজির দাম কমার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে বাঁধাকপি ও ফুলকপিতে। মাঝারি আকারের বাঁধাকপি মান ও বাজারভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৩০ টাকার বেশি। একইভাবে ফুলকপির দামও নেমেছে। আকারভেদে বর্তমানে ফুলকপি ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শিমের বাজারেও দরপতন লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে বাজারে চার ধরনের শিম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন আসা বিচিওয়ালা শিম কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় এবং অন্যান্য জাতের শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে নতুন আলুর দামে। কয়েক সপ্তাহ আগেও যেখানে নতুন আলু কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকায়। একইভাবে মুলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। বেগুনের দামও নিম্নমুখী। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা কমে বর্তমানে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
তবে সবজির বাজারে এখনো পুরোপুরি স্বস্তি আসেনি টমেটোতে। পাকা টমেটোর দাম কিছুটা কমলেও তা এখনও তুলনামূলক চড়া। বর্তমানে পাকা টমেটো কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে শাকের বাজারে ভালো স্বস্তি রয়েছে। পালং শাক, লাল শাক ও মুলা শাকের আঁটি বাজারভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
প্রোটিন পণ্যের বাজারও আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে। ফার্মের বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন ও সরবরাহে বড় কোনো অস্থিরতা না থাকায় ডিম ও মুরগির বাজারে আপাতত দামের চাপ নেই।
মাছের বাজারেও বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়নি। চাষের তেলাপিয়া, পাঙাশ ও কই মাছ কেজিপ্রতি ২০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। মাছ বিক্রেতাদের ভাষ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে এবং শীত মৌসুমে এ ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
সব মিলিয়ে শীতের আগমনে সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ায় বাজারে যে স্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। তবে বাজারে এই স্বস্তি টেকসই করতে নিয়মিত সরবরাহ বজায় রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ●
অকা/প্র/ই/দুপুর/২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 days আগে

