অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে বড় ধরনের চাপে পড়েছে। দেশের সংকটাপন্ন পাঁচটি ব্যাংকের তীব্র তারল্য ঘাটতির কারণে রফতানিকারকরা সময়মতো তাদের বৈদেশিক আয়ের প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না। ফলে অনেক কারখানা নিয়মিত উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে সমস্যায় পড়ছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর সংকটের কারণে একদিকে প্রত্যাবসিত রফতানি মূল্য আটকে থাকছে, অন্যদিকে নতুন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে রফতানি ও আমদানির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। পোশাক কারখানাগুলো কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা সরাসরি রফতানি লক্ষ্য পূরণকে অনিশ্চিত করে তুলছে।
এ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ফাহিমা আক্তার ও এবিএম সামছুদ্দিনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি গভর্নরের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কারণে রফতানি আয় দেশে ফেরার পরও তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রফতানিকারকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সময়মতো দেওয়া যাচ্ছে না, যা ইতোমধ্যেই শ্রমিক অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলছে এবং শিল্প এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করছে।
তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এসব সংকটের কারণে বাংলাদেশের ওপর আস্থা হারাতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ ধরে এগিয়ে চলা পোশাক খাতের জন্য এটি বড় হুমকি হতে পারে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে অচিরেই অনেক কারখানা রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হবে এবং বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারাবেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পোশাক খাত দেশের রফতানি আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি। তাই এ খাতের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, সাময়িকভাবে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে রফতানিকারকদের জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটানো যায়। পাশাপাশি, সমস্যাটির একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য শিগগিরই নীতিগত ও কাঠামোগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা এখন সরাসরি দেশের রফতানি ও শিল্প খাতকে বিপর্যস্ত করছে। রফতানিকারকদের সময়মতো অর্থপ্রদান না হলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এতে শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোতে দ্রুত আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। ●
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/২৭ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে