অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আবারো স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন, বৈদেশিক খাতে ভারসাম্যের উন্নতি এবং রফতানি আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) খাতে লেনদেন অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়িক লেনদেন ও বেতন প্রদানের খাতে প্রবৃদ্ধি লক্ষণীয়। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন রেকর্ড করা হয়, যা ১৫ লাখ ৩৭ হাজার কোটি থেকে ১৭ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। একইভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ই-কমার্স লেনদেন আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
কৃষিঋণ বিতরণও ইতিবাচক ধারা বজায় রেখেছে। ২০২৫ সালের মে মাসে কৃষিঋণ বিতরণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। শিল্পোৎপাদনেও কিছুটা অস্থিরতা থাকলেও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে।
বৈদেশিক খাতে অগ্রগতি- ২০২৫-২৬ হিসাবের ভারসাম্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্তে দাঁড়িয়েছেÑ গত পাঁচ বছরে এটাই প্রথম। সামগ্রিক ভারসাম্যও ৩.৩ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সেবা খাতের স্থিতিশীলতা এ উন্নতিতে অবদান রেখেছে।
রফতানি আয়ও নতুন গতি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪,৭৭০.৫৯ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। আমদানিও ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, বিশেষত মূলধনী পণ্যের আমদানি বিনিয়োগে আগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ- ২০২৫ সালের জুলাই মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ দাঁড়ায় ২,৪৭০ মিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ বেশি। মৌসুমি সময়গুলোতে প্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও গৃহস্থালি আয় উভয়ই সহায়তা পেয়েছে।
চালের দাম ও মূল্যস্ফীতি, বড় চ্যালেঞ্জ- অর্থনীতির ইতিবাচক ইঙ্গিত সত্ত্বেও চালের দাম এখনো উদ্বেগের জায়গা তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান বেড়ে দাঁড়ায় ৫১.৫৫ শতাংশে। মাঝারি ও মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। জুলাই মাসে সব ধরনের চালেই প্রায় ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড করা হয়।
সরকার বোরো মৌসুমে ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। তবে জুলাই মাসে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৬২ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম। বাজার নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির সুযোগ দেয়া হলেও এর প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগবে বলে জিইডি মনে করছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ- বর্তমানে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামানো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরবরাহ-সংক্রান্ত চাপ থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ও আর্থিক নীতির সমন্বিত পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে অনিয়মিত আবহাওয়ার কারণে আগামী মাসগুলোতে চালের দাম আবারো বাড়তে পারে। এ জন্য আমদানি ত্বরান্বিত করা, সরকারি সংগ্রহ বাড়ানো ও ওএমএস কার্যক্রম সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছে জিইডি।
অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক ইতিবাচক প্রবণতা এবং বিচক্ষণ নীতি ব্যবস্থাপনা স্থিতিশীলতার নতুন বার্তা দিচ্ছে। তবে খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ●
অকা/আখা/ফর/রাত/১৮ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

