অর্থকাগজ ডেস্ক ●
যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি কমার গতি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ধীর হয়ে পড়েছে। অক্টোবরে বাড়ি ভাড়া বাড়ায় ভোক্তা মূল্য বেড়েছে। এতে আগামী বছর নাগাদ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) কবে নাগাদ কী পরিমাণে সুদহার কমাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর হ্রাস ও আমদানি শুল্ক বাড়ানোর নীতি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
১২ নভেম্বর মার্কিন শ্রম বিভাগ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবরে অন্তর্নিহিত মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। তবে শ্রমবাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও চাহিদার পরিমাণ ছিল কম। এ প্রোপটে ফেড ডিসেম্বরে তৃতীয়বারের মতো সুদহার কমাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আর্থিক পরিষেবার সংস্থা ওয়েলস ফার্গোর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাইকেল পুগলিসে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি স্থবির হতে শুরু করেছে। ফেড সুদহার কমানোর গতি সম্ভবত ২০২৫ সাল থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে বা প্রতি দুই বৈঠকে কমবে।’
শ্রম বিভাগের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকস এক প্রতিবেদনে জানায়, ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) টানা চতুর্থ মাসে দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বাসা ভাড়া দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে, যা অক্টোবরের মাসিক সিপিআই বাড়ার পেছনে ৫০ শতাংশের বেশি ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের দাম দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, সেপ্টেম্বরে যা ছিল দশমিক ৪ শতাংশ। মুদি সামগ্রীর দাম দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া রুটি, দুগ্ধজাত পণ্য ও ফলমূল-শাকসবজির দামও বেড়েছে। তবে মাংস, মুরগি ও মাছের দাম কিছুটা কমেছে। ডিমের দাম ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে।
গ্যাসোলিনের (পেট্রল) দাম আরো দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। তবে বিদ্যুতের দাম ১ দশমিক ২ ও প্রাকৃতিক গ্যাস দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
অক্টোবর পর্যন্ত গত ১২ মাসে সিপিআই আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ২ দশমিক ৪। মূল্যস্ফীতি নিয়ে জনগণের অসন্তোষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছে। সম্প্রতি তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় মতায় গেলে কর হ্রাস ও আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কথা বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ট্রাম্প কর হ্রাস ও আমদানি পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির নীতি বাস্তবায়ন করলে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে দেশটিতে শ্রমিক সরবরাহ কমে যাবে এবং ব্যবসার খরচ বাড়াবে, যা ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ফেড ডিসেম্বরে সুদহার কমানোর কথা ভাবছে। তবে পরবর্তী বছরগুলোয় এ প্রক্রিয়া সীমিত হতে পারে। এদিকে ট্রাম্প মতাসীন হওয়ার পর মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড (মুনাফা) বেড়ে গেছে।
উইলিয়াম ব্লেয়ারের ম্যাক্রো অর্থনীতি বিশ্লেষক রিচার্ড ডি শ্যাজাল বলেন, ‘ট্রাম্পের নীতিগুলো স্বল্পমেয়াদে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে। ভোক্তাদের মূল্যস্ফীতি সহ্য করার ইচ্ছা ও সমতা এখন অনেকটাই ভঙ্গুর। ফলে খুব সামান্য পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।’
এদিকে প্রাথমিকভাবে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আবার বেড়েছে। ডলারের বিনিময় হার অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ১২ নভেম্বর ওয়াল স্ট্রিটের পুঁজি বাজারও বেশির ভাগ সময় ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। ২০২২ সালে জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল এ-যাবত কালের সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এটি এখনো ফেডের ২ শতাংশ ল্যমাত্রার ওপরে রয়েছে। গত সপ্তাহে ফেড সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে।
সিএমই গ্রুপের ফেডওয়াচ টুলের তথ্যানুযায়ী, আর্থিক বাজারগুলোয় ফেডের ১৭-১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর প্রায় ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ সম্ভাবনা দেখা গেছে, যা সিপিআই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ছিল ৫৮ দশমিক ৭। সুদহার অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা দেখা গেছে প্রায় ১৭ দশমিক ৭, যা আগে ছিল ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ। ●
অকা/বিঅ/ফর/সন্ধ্যা/১৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 12 months আগে

