অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতে বিদ্যমান গ্রাহকদের আস্থাহীনতা এখন কমতে শুরু করেছে। এর ফলে আমানতকারীরা আবারও ব্যাংকমুখী হচ্ছেন এবং সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত, ব্যাংক খাতে গড়ে আমানত ১৪.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় এবং বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছিল, যার ফলে ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। বর্তমানে আমানত প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারল্য সংকটের প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। তবে, আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাপক লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া কিছু ব্যাংকে এখনও তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করে আছে।
ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, ব্যাংকগুলোও আমানতের মুনাফার হার বাড়িয়ে গ্রাহকদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত সংগ্রহ করছে, যা গ্রাহকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত, ব্যাংক খাতে গড়ে আমানত ১৪.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমানতের প্রবাহে কিছু উত্থান-পতন দেখা গেছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত ৭.৭৩ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৯.২৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৮.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিন বছরের পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরে আমানত বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম। ব্যাংকাররা এর কারণ হিসেবে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। লুটপাটের আশঙ্কায় অনেকেই তাদের আমানতের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ব্যাংক থেকে গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিতে শুরু করেন। পাশাপাশি, লুটপাটের চিত্র জনসমক্ষে আসায় গ্রাহকরা নানা শঙ্কায় পড়েন, যার কারণে ওই সময়ে আমানত প্রবাহ কমেছিল। তবে, বর্তমান সরকার আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন আমানত প্রবাহ আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুনের শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি ছিল ১৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। একই বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে ১৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই সময়ে (২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর) আমানত ৫৯ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল, যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আমানতের স্থিতি আরও বেড়ে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আমানত ৮৯ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল, অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৩৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমানতের স্থিতি আরও বেড়ে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা হয়। ওই বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত ৩৪ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল, যা বৃদ্ধির হার ছিল ১.৯৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত সবচেয়ে কম বেড়েছিল। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত আমানতের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আমানত ৫৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, যার বৃদ্ধির হার ৩.১৫ শতাংশ।
গত দুই বছরের গড় হিসাবে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত, ব্যাংকগুলোতে আমানত ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, যা বৃদ্ধির হার ১৪.৯২ শতাংশ। চলতি বছরের জুনেও সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট কমে গেছে। বর্তমানে শুধু লুটপাটের কারণে দুর্বল কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে সার্বিকভাবে তারল্য সংকট হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে মাত্রাতিরিক্ত তারল্য রয়েছে, যা তারা চাহিদা না থাকায় বিনিয়োগ করতে পারছে না।
সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কম হওয়ায় এবং আমানত বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণও বেড়েছে। গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৪ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিল মাসে তা বেড়ে ৫ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য ৯৮ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, যা বৃদ্ধির হার ২০.৭২ শতাংশ। গত জুন মাস পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে সার্বিকভাবে অতিরিক্ত তারল্য আরও বেড়েছে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/৩১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

