অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কজনিত অস্থিরতা যখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজারে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ৯৬৮ কোটি ৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৮২৩ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা প্রায় ১৪৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার বেশি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইইউর বাজারে মোট ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। ইইউতে তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন, যার রফতানি প্রবৃদ্ধি এ সময়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তারা পাঁচ মাসে ইইউতে রফতানি করেছে ১ হাজার ১০ কোটি ডলারের পণ্য। আর বাংলাদেশ অবস্থান ধরে রেখেছে দ্বিতীয় স্থানে, যার রফতানির পরিমাণ ৯৬৮ কোটি ডলার। দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৪২ কোটি ডলার।
শীর্ষ দুই দেশের পর ইইউর বড় রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। তবে তুরস্কের রফতানি কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তারা ইইউতে ৩৮৭ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে ভারত ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে। তারা পাঁচ মাসে ২৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। মে মাসে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ইইউ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির প্রায় ৫০ শতাংশ গেছে এই বাজারে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও মে মাসে চিত্র ছিল ভিন্ন। মে মাসে ইইউতে বাংলাদেশের রফতানি হয়েছে ১৬১ কোটি ডলারের, যা গত বছরের মে মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে একই সময়ে চীনের রফতানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। মে মাসে তারা ইইউতে রফতানি করেছে ১৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কজনিত অস্থিরতা এবং চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে চীনের অনেক রফতানিকারক ইইউর দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে ইউরোপের বাজারে চীনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের রফতানিকারকেরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক কমানো না হলে বাংলাদেশের জন্য দুই বড় বাজারেই চাপ তৈরি হতে পারে। ইইউর বাজারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশকে নতুন রফতানি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। উচ্চমূল্যের পণ্য, বৈচিত্র্য, ডিজাইন ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। ●
অকা/তৈপোশি/ই/দুপুর/২৬ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 5 months আগে

