অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর ২৪ জুলাই থেকে গাজীপুরের পোশাক কারখানাগুলো পুরোদমে চালু হয়েছে। একদিকে উৎপাদন বন্ধ, অন্যদিকে সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পেরে উভয়মুখী সংকটে পড়েছেন শিল্প-মালিকরা। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে স্ষ্টৃ সংঘাতের কারণে টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকে দেশের তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলো।
জানা যায়, ২৪ জুলাই থেকে শিল্প-অধ্যুষিত গাজীপুরে সব কারখানায় তিন শিফটে উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতেও শিল্প-মালিকদের দুশ্চিন্তা কমেনি। কারণ গত পাঁচদিনে এ শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, একই সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সময়মতো শিপমেন্ট করা যায়নি। ফলে নানামুখী ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। এখনও অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সচল হয়নি। ফলে বায়ারদের অর্ডার ও আটকে থাকা পণ্য শিপমেন্ট করতে সমস্যা হচ্ছে। সময়মতো পণ্য পাঠাতে জাহাজের পরিবর্তে এয়ার শিপমেন্টের চিন্তা করছেন পোশাক রফতানিকারকদের কেউ কেউ। ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে সার্বিকভাবে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তারা।
কারখানাসংশ্লিষ্টদরা জানান, পাঁচদিন পর পুনরায় উৎপাদন শুরু হওয়ায় মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু না হওয়ার কারণে সময়মতো শিপমেন্ট সম্পন্ন করা যাবে কিনা কিংবা বায়াররা শিপমেন্ট বাতিল করবে কিনা এসব নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়ে গেছে। এছাড়া তিন শিফটে কাজ শুরু করলেও পুরনো অর্ডার অনুযায়ী সময়মতো পণ্য উৎপাদন করতে বেশ বেগ পেতে হবে বলেও ধারণা উৎপাদনসংশ্লিষ্টদের।
গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ ডেনিমস কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার আবু তালেব জানান, গত কয়েকদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে অনেক শিপমেন্ট আটকা পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘বায়ারদের যেসব অর্ডার ছিল, সেসব পণ্য যথাসময়ে সাপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা তিন শিফটেই কাজ করছি। তবে আশঙ্কা হচ্ছে, বায়াররা কোনো শিপমেন্ট বাতিল করলে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হব।’
কোনাবাড়ীর তুসুকা গার্মেন্টসের এজিএম মাসুম হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় দৈনিক এক লাখ পিস প্যান্ট উৎপাদন হয়। এ পাঁচদিনে আমাদের পাঁচ লাখ পিস পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া সময়মতো শিপমেন্ট করতে পারিনি। ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হওয়ায় বায়ারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় বায়াররা সময়মতো শিপমেন্ট না হলে পণ্য নিতে চান না। আবার কখনো মূল্য কম দেয়। সময় বাঁচাতে পণ্য বিমানে পাঠাতে হয়। এসব কারণে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।’
গাজীপুরের তিন সড়ক এলাকায় অবস্থিত স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রধান উৎপাদন কর্মকর্তা (সিওও) শরিফুল রেজা জানান, তাদের কারখানায় দৈনিক ৩৫ হাজার পিস পণ্য উৎপাদন হয়। গত পাঁচদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৮ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারায় প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ পিস পণ্য আটকা পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট না থাকায় বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফলে সময়মতো বায়ারদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য এখন আমরা এগুলো বিমানে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’
এদিকে পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানাগুলোয় সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশের ৪২০ সদস্যসহ সব কর্মকর্তা কাজ করছেন।’
তিনি আরো জানান, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর মহানগর পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরাও টহল দিচ্ছেন। কোথাও কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিল্প উৎপাদন অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শিল্প পুলিশের এ কর্মকর্তা। ●
অকা/পোশি/ফর/সকাল/২৫ জুলাই, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

