এহসানুল আজিজ

ঋণ যখন আটকে/খেলাপি হয়ে পড়ে এবং সকল প্রকার প্রয়াস সত্বেও ঋণগ্রহীতা যখন দায় পরিশোধ এড়িয়ে চলেন বা ঋণ দীর্ঘ সময় অনাদায়ী ও শ্রেণীবিন্যাসিত হয়ে পড়ে এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা সংস্থা যখন নিশ্চিত হয় যে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া আটকে পড়া ঋণ আদায়ের আর কোনো বিকল্প পথ নেই, তখনই মামলা দায়েরের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়। তবে মামলা প্রস্তুতি গ্রহণকালে শুরু থেকে মামলা দায়ের পর্যন্ত সমুদয় কার্যকলাপ অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুষ্ঠভাবে সময়মতো সমাধা করতে হবে যেন অবহেলা বা কৌশলগত ত্রুটির কারণে মামলার সাফল্য ঝুঁকিপূর্ন বা মামলা দায়েরের বিলম্ব জনিত কারণে ঋণ আদায় তামাদি আইনে বারিত না হয়ে পড়ে। ঋণ আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সমূহ কে দ্ইু ভাগে ভাগ করা যায় -
ক. মামলা দায়ের পূর্ববর্তী কার্যক্রম
খ. মামলা দায়ের পরবর্তী কার্যক্রম
ক. মামলা দায়ের পূর্ববর্তী পদক্ষেপ সমূহ-

(১) ঋণ গ্রহীতা ঋণ গ্রহণের পর শর্ত মোতাবেক হিসাব পরিচালনা না করলে পরামর্শ এবং সতর্কীকরণ পত্র প্রদান।

(২) ঋণ পরিশোধে তাগাদা পত্র ঃ ঋণ হিসাব মেয়াদোত্তীর্ণ হলে/কিস্তি খেলাপি হলে প্রতি মাসে অন্তত একটি তাগাদা পত্র প্রদান করতে হবে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে ঋণের জামিনদার ও ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত তৃতীয় পক্ষের হলে তাকেও ঋণ গ্রহীতার উপর কার্যকরী চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দায় পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাগিদ প্রদান করতে হবে। ব্যক্তিভাবে ঋণগ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকৃত অবস্থা যাচাই বা চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

(৩) ঋণগ্রহীতার কোন বক্তব্য/জবাব থাকলে তার বিপরীতে ব্যাংক শাখা কর্তৃক যথাযথ জবাব প্রদান বা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহন ও তা ঋণ গ্রহীতাকে অবহিত করতে হবে।

(৪) সকল প্রকার তদবির, তাগিদ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ইত্যাদি ব্যর্থ হলে ঋণ আদায়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। এই অবস্থায় ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের জন্য চুড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রদান করতে হবে। চুড়ান্ত বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বের তাগিদপত্র সমূহের উল্লেখ পূর্বক ঋণ গ্রহীতাকে প্রাপ্তিস্বীকার মূলক পত্রের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমূদয় দায় পরিশোধের জন্য চুড়ান্ত নোটিশ প্রদান করতে হবে। নোটিশের উপরিভাগে চুড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি শব্দটি উল্লেখ করতে হবে। নোটিশের অনুলিপিতে বন্ধকদাতা ও গ্যারান্টারকেও ঋণের বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চুড়ান্ত তাগিদ প্রদান করতে হবে। ব্যর্থতায় মর্টগেজকৃত সম্পত্তি বিক্রয় করে ঋণ সমন্বয় করা তথা ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে তাগিদ প্রদান করতে হবে।

(৫) চুড়ান্ত নোটিশে সাড়া না পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর অধীনে মামলা দায়ের করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করতে হবে :
আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কতিপয় জামানত বিক্রয় (ধারা-১২)
(i) অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ধারা ১২(১) ও ১২(২) এর বিধান মোতাবেক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার নিয়ন্ত্রণ বা দখলে থাকা ঋণখেলাপির কোন সম্পত্তি যা পণ্য বা বন্ধক (Lien or pledge) রেখে ঋণ প্রদান করা হয়েছে এবং যা বিক্রয় করার আইনগত অধিকার ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে তা নিলাম বিক্রয় পূর্বক বিক্রয়লব্ধ অর্থ ঋণ হিসাবে সমন্বয় করবে।
(ii)উপ-ধারা(১) এর বিধান সত্বেও, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজ দখল বা নিয়ন্ত্রণ থাকা পন্য বা বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় না করে মামলা দায়ের করলে অনতিবিলম্বে উক্ত সম্পত্তি পূর্ব-বর্ণিত মতে বিক্রয় করে বিক্রিত অর্থ ঋণের সঙ্গে সমন্বয় করবে এবং বিষয়টি আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করবে ।
(iii) ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপির নিকট থেকে কোন স্থাবর সম্পত্তি (Immovable Property) বন্ধক (Mortgage) রেখে অথবা অস্থাবর সম্পত্তি (Movable Property) দায়বদ্ধ রেখে (Hypothecation) ঋণ প্রদান করলে এবং বন্ধক প্রদান বা দায়বদ্ধ রাখার সময় বন্ধকী বা দায়বদ্ধ সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষমতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান উক্ত সম্পত্তি এই আইনের ১২(৩) ধারা মোতাবেক বিক্রয় করে ঋণ হিসাবে সমন্বয় করবে অথবা বিক্রয়ের চেষ্ঠা করে ব্যর্থ না হয়ে অর্থঋণ আদালতে কোন মামলা দায়ের করবে না।
(iv) উপরোক্ত সম্পত্তি সমূহ বিক্রয়ের লক্ষ্যে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ১৫ (পনের) দিন সময় দিয়ে সিলমোহরকৃত দরপত্র আহ্বান করবে। উক্ত বিজ্ঞপ্তি কমপক্ষে বহুল প্রচারিত একঢি বাংলা জাতীয় পত্রিকায় ও একটি স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশ করবে। অন্যদিকে, দরপত্রে অংশগ্রহন করে সম্পত্তি/সম্পত্তি সমূহ ক্রয়ে আগ্রহী একজন সম্ভবনাময় ক্রেতা জোগাড়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।
(v) উপরোক্ত ধারা ১২(৩) এ উল্লেখিত নিলাম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক এই আইনের ধারা ৩৩ এর উপধারা (১),(২) ও (৩) এর বিধান, যতদূর সম্ভব, অনুসরণ করবে।
(vi) সম্পত্তি নিলাম বিক্রয়কালে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্টানকে খেয়াল রাখতে হবে যে, দাখিলকৃত দরপত্রে সম্পত্তির প্রস্তাবিত মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে অপর্যাপ্ত বা কম না হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্টান উক্ত দরপত্র বাতিল করবে এবং সম্ভনাময় ক্রেতা কর্তৃক উপযুক্ত মূল্যে দরপত্র দাখিল করবে এমন নিশ্চিত হয়ে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করবে। উল্লেখ্য যে, দরপত্র আহ্বানের পূর্বে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভূক্ত সার্ভেয়ার ও ব্যাংকে/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দক্ষ কর্মকর্তার দ্বারা নিলামের জন্য নির্বাচিত সম্পত্তি/সম্পত্তি সমূহের প্রকৃত মূল্য নির্ণয় করবে। এক্ষেত্রে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সম্ভাব্য ক্রেতাকেও নিলামে বিক্রয়তব্য সম্পত্তি/সম্পত্তি সমূহ পরিদর্শনসহ সব রকম সহযোগীতা করবে।
(vii) নিলামে সর্ব্বোচ্চ দরদাতাকে অবিলম্বে অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধের পর ব্যাংক সম্পত্তি রেজিষ্ট্রশনসহ দখল বুঝিয়ে দিবে। এই ক্ষেত্রে বন্ধকদাতা ঋণখেলাপি কে ব্যাংক লিখিতভাবে ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করবে যদি বন্ধকদাতা দখল বুঝিয়ে না দেয় এবং সম্পত্তি দখলমুক্ত না করে দেয় তবে ব্যাংক জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কে বা যেকোনো প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট কে ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে বন্ধকীকৃত/ প্লেজকৃত সম্পত্তি/মালামালের সঠিকতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সম্পত্তি/মালামাল নিলামে নির্বাচিত নতুন ক্রেতা বা ব্যাংককে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিকভবে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(viii) ব্যাংক নিলামে বিক্রয়লব্ধ সমুদয় মূল্য ঋণ হিসেবে সমন্বয় করবে। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক দুটি কার্যক্রম গ্রহণ করবে:
যদি নিলাম বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা ঋণ হিসাব সমন্বয় না হয় তবে অবশিষ্ট অনাদায়ী টাকা আদায়ের জন্য ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর অধীনে মামলা দায়ের করবে;
যদি সমুদয় পাওনা পরিশোধের পর অতিরিক্ত টাকা থেকে যায় তবে তা ঋণগ্রহীতার চলতি হিসাবে জমা করে দিবে।

(৬) ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি নিলাম বিক্রয়ে ব্যর্থ হয় তবে ঋণ তামাদি হওয়ার পূর্বেই অবিলম্বে মামলা দায়ের করবে। এক্ষেত্রে ধারা-১২(৬) অনুসারে আদালত স্ব-উদ্যোগে অথবা দায়িকের লিখিত আবেদনক্রমে, ডিক্রি প্রদান করবার সময় ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উক্ত সম্পত্তির প্রদর্শিত মূল্যায়নের (যদি থাকে) সমপরিমান অর্থ মামলার দাবী থেকে বাদ দিয়ে ডিক্রি প্রদান করবে। যদি প্রদর্শিত মূল্য না থাকে তবে আদালত সম্পত্তির স্থানীয় অধিক্ষেত্রে সাব-রেজিষ্ট্রারের প্রতিবেদন গ্রহণ করে মূল্য নির্ধারণ করবে এবং নির্ধারিত উক্ত মূল্যের সমপরিমান অর্থ মামলার দাবী থেকে বাদ দিয়ে ডিক্রি প্রদান করবে। অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২(৮) ধারা অনুসারে অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, এই ধারার অধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান Lien, Pledge, Hypothecation অথবা Mortgage এর অধীন প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে কোন জামানতীর স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করা হলে,উক্ত বিক্রয় ক্রেতার অনুকূলে বৈধ স্বত্ব সৃষ্টি করবে এবং ক্রেতার ক্রয়কে কোনভাবেই তর্কিত করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্টান কর্তৃক বিক্রয় কার্যক্রমের কোনরকম অবৈধতা বা পদ্ধতিগত অনিয়ম থাকলে জামানত প্রদানকারী ঋণগ্রহীতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান/ব্যাংকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে।

(৭) মামলা দায়েরের পূর্বে ঋণ হিসাবটি তামাদি আইনে বারিত কিনা তা যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে। ঋণগ্রহীতা বা জামিনদার কেহ মারা গেলে তাদের ওয়ারিশগণ কে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে দেনা স্বীকার করাতে হবে। অন্যথায় পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। মামলায় ঠিকমত বিবাদী না করা হলে অথবা ভূল বিবাদী করা হলে মামলা NonJoinder ও Misjoinder of parties দোষে দোষিত হবে। এতে দায়েরকৃত মামলা যদিও খারিজ হবে না তবে আরজি সংশোধন জনিত জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় এবং ফলশ্রুতিতে মামলার কার্যক্রমও বিলম্বিত হয়।
[ * Nonjoinder : পক্ষভূক্ত না করা। মামলায় সকল আবশ্যকীয় পক্ষকে বাদীপক্ষ ভূক্ত করে নাই, এই অভিযোগে মামলা খারিজের অজুহাত। এই ত্রুটি আরজি সংশোধন করে মোচন করা যায়।
** Misjoinder of parties : পক্ষসমূহের ভুল সংযুক্তিকরণ। কোন মামলায় পক্ষসমূহের অসঙ্গত সংযুক্তিকরণ বা পক্ষভূক্তি। আধুনিক রীতি অনুযায়ী এর ফলে মামলাটি খারিজ হয়ে যায় না, তবে আরজি সংশোধনের দ্বারা একে শুদ্ধ করতে হয় ।]
উল্লেখ্য যে,উপরোক্ত পদক্ষেপ সমূহ ঋণ পরিশোধের দাবি তামাদি আইনে বারিত হওয়ার যথেষ্ট পূর্বেই সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ধারা ৪৬ ও ৪৭ এর - বিধান প্রনিধানযোগ্য:
ধারা-৪৬: মামলা দায়ের সম্পর্কিত বিশেষ বিধান ও সময়সীমা .
১. The Limitation Act.1908 (Act Number IX of 1908)এ ভিন্নতর বিধান যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পাদিত চুক্তি বা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে ঋণ পরিশোধসূচি (Repayment Schedule) অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ শুরু হবার পরবর্তী-
(ক) প্রথম এক বৎসরে প্রাপ্ত অর্থের অন্যুন ১০% অথবা
(খ) প্রথম দুই বৎসরে প্রাপ্ত অর্থের অন্যূন ১৫% অথবা
(গ) প্রথম তিন বৎসরের প্রাপ্ত অর্থের অন্যুন ২৫%
পরিমান অর্থ আদায় না হলে, উপ-ধারা(২) এর বিধান সাপেক্ষে, এর পরবর্তী এক বৎসরের মধ্যে
মামলা দায়ের করবে।

২. আর্থিক প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা(১) এ উল্লেখিত মেয়াদের মধ্যেই ঋণ পরিশোধের তফসিল পুনঃ তফসিল (জব-ংপযবফঁষব) করে থাকলে, উক্ত উপ-ধারা(১) এর বিধান তদানুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে (Re-schedule) নতুনভাবে কার্যকর হবে।

৩. উপ-ধারা(১) এ উল্লেখিত ঋণ পরিশোধ সূচি (Re-payment Schedule) অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত মেয়াদ (৩) তিন বৎসর অপেক্ষা কম হবার ক্ষেত্রে. উক্ত নির্ধারিত সাকুল্য মেয়াদের মধ্যে আদায়ের পরিমান ২০% অপেক্ষা কম হলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা(৪) এর বিধান সাপেক্ষে, এর পরবর্তী ১ (এক) বৎসরের মধ্যে মামলা দায়ের করবে।

৪. আর্থিক প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা(৩) এ উল্লেখিত মেয়াদের মধ্যেই ঋণ পরিশোধের তফসিল পুনঃতফসিল (জব-ংপযবফঁষব) করে থাকলে, উক্ত উপ-ধারা(৩) এর বিধান তদানুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে(গঁঃধঃরং গঁঃধহফরং) নতুনভাবে কার্যকর হবে।

৫. উপ-ধারা(১) বা, ক্ষেত্রমত,(২) এবং (৩) বা, ক্ষেত্রমত(৪) এ উল্লেখিত মেয়াদান্তে কোন মামলা দায়ের করা হলে, আদালত অবিলম্বে বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাহীকে লিখিতভাবে অবহিত করবে এবং কোন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে মেয়াদের মধ্যে উক্ত মামলা দায়ে না হলে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অনুরূপ দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এই উপ-ধারার অধীন অবহিত হবার ৯০ (নব্বই) দিবসের মধ্যে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার এবং আদালতকে অবহিত করবে।

দাবি আরোপে সীমাবদ্ধতা (ধারা-৪৭)
১. বর্তমানে প্রচলিত অন্য কোন আইন বা পক্ষগণের মধ্যে সম্পাদিত সংশ্লিষ্ট চুক্তিতে যাহাই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোন ঋণ গ্রহীতাকে প্রদত্ত আসল ঋণের উপর দায় এমন ভাবে আরোপ করে আদালতে মামলা দায়ের করবে না, যাতে আদালতে উত্থাপিত উক্ত সমূদয় দাবি আসল ঋণ অপেক্ষা ২০০% (১০০+২০০= ৩০০ টাকা) এর অধিক হয়।

২. উপ-ধারা(১) এ বর্নিত মতে আসল ঋণ অপেক্ষা ২০০% এর অধিক অনুরূপ দাবি আদালত কর্তৃক গ্রহনযোগ্য হবে না।

আরজি প্রস্তুত (ধারা-৮)
(১) আথির্ক প্রতিষ্ঠান আরজি দাখিলের মাধ্যমে মামলা দায়ের করবে এবং উক্ত আরজিতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ উল্লেখিত হবে, যথাঃ
(ক) বাদীর নাম, ঠিকানা, কর্মস্থল, ইত্যাদির বিবরণ;
(খ) বিবাদীর নাম, ঠিকানা,কর্মস্থল, বাসস্থান ইত্যাদির বিবরণ;
(গ) দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত সকল ঘটনা;
(ঘ) মামলার কারণ উদ্ভবের ঘটনা, স্থান এবং তারিখ;
(ঙ) কোর্ট ফি প্রদানের উদ্দেশ্যে মামলার তায়দাদ;
(চ) আদালতের এখতিয়ার আছে মর্মে বিবরণ; এবং
(ছ) প্রার্থিত প্রতিকার।

(২) পূর্ববর্তী উপ-ধারায় বর্ণিত অতিরিক্ত, বাদী, আরজিতে আরো অর্ন্তভূক্ত করবে।
[ এখানে বাদী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান আরজিতে ঋণ হিসাব পরিপালনের, সম্মতি ও স্বীকৃতি, ঋণ গ্রহণের পরবর্তীতে শর্ত ভঙ্গের বিবরণ, ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের যেসব সুযোগ প্রদান করা হয়েছে তার বিবরণ। ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলকরণ করা হয়ে থাকলে এবং একের অধিক বার পুুনঃ তফসিলকরণ করা হয়ে থাকলে তার বিবরণ, ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকারনামা বা স্বীকৃতি, পুনঃ অঙ্গীকার করেও তা পালন না করা, ঋণগ্রহিতাকে ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ সহযোগীতা স্বরূপ সুদ ছাড় দেওয়া,কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের জন্য দীর্ঘ সময় প্রদান ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, আরজি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকাভূক্ত আইনজীবিরাই প্রস্তুত করবেন। এখানে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হল ঋণ হিসাবের পূর্নাঙ্গ বিবরণ অর্থাৎ ঋণ প্রস্তাব গৃহীত হবার পর থেকে ঋণ মঞ্জুর, বিতরণ দলিলাদি সম্পাদনের বিবরণসহ হালনাগাদ তথ্য লিখিতভাবে আইনজীবিকে অবহিত করা । আাইনজীবি সংশ্লিষ্ট লিখিত পত্র থেকে আরজি প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ করে অর্থ ঋণ আদালতের বিধি মোতাবেক আরজির খসড়া প্রনয়ন করবেন এবং তা যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের জন্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট উপস্থাপন করবেন। যাচাই-বাছাইকালে ব্যাংক/আর্র্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/আইন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনজীবিকে/কর্মকর্তাকে আরজিতে যেসব তথ্য প্রদান করা হয়েছে যেমন, বিবাদীর নাম ঠিকান, ঋণের বিপরীতে বন্ধকীকৃত জমির সিডিউল এবং বন্ধকীকৃত সমূদয় জামানতের বিবরণ ও অন্যান্য তথ্য/ তথ্যাবলী সঠিক ও নির্ভূলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা/আইনজীবি তা যাচাই-বাছাই পূর্বক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন নিয়ে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুসৃত নিয়ম-কানুন পরিপালন করে আইনজীবিকে মামলার দায়েরের জন্য প্রয়োজনীয় নিদের্শনাসহ সংশোধিত ও অনুমোদিত আরজির খসড়া হস্থান্তর করবেন ।]
(ক) একটি তফসিল, যাতে প্রদর্শিত হবে-
(অ) বিবাদীকে প্রদত্ত মূল ঋণ বা, ক্ষেত্রমত, বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমান;
(আ) স্বাভাবিক সুদ বা, ক্ষেত্রমত, মুনাফা বা ভাড়া হিসাবে আরোপিত টাকার পরিমাণ;
(ই) দন্ড সুদ হিসাবে আরোপিত টাকার পরিমান;
(ঈ) আর অন্যান্য বিষয় বাবদ বিবাদীর উপর আরোপিত টাকার পরিমাণ।
(উ) মামলা দায়ের এর পূর্ব পর্যন্ত প্রণীত শেষ হিসাব মতে বিবাদী কর্তৃক বাদী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ বা পাওনা পরিশোধ বাবদে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ; এবং
(ঊ) বাদী কর্তৃক প্রদত্ত ও ধার্য মোট এবং বিবাদী কর্তৃক পরিশোধিত মোট টাকার তুলনামূলক অবস্থানঃ

(খ) একটি তফসিল, যাতে ঐসকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি যা বন্ধক বা জামানতি দলিলের বিস্তারিত পরিচয়, বিবরণ এবং আর্থিক মূল্যায়ন যদি হয়ে থাকে, প্রদর্শিত হবে।

(৩) বাদী তার দাবীর সমর্থনে সাক্ষ্য হিসাবে কোন দলিলের উল্লেখ করলে এবং ঐ দলিল তার দখলে থাকলে, আরজির সাথে উক্ত দলিল অথবা তার সত্যায়িত নকল বা ফটোপ্রাফি ফিরিস্তি সহকারে দাখিল করবে।

(৪)বাদী তার দাবীর সমর্থনে সাক্ষ্য হিসেবে তার দখলে নাই এমন কোন দলিলের উপর নির্ভর করলে উক্ত দলিল কার নিকট আছে তা উল্লেখ করে উক্ত দলিলের একটি তালিকা আরজির সাথে দাখিল করবে।
(৫) উপ-ধারা(২) ও (৩) এর বিধান এর ব্যত্যয় এ, পরবর্তীতে কোন দলিল বাদী দাখিল করলে, আদালত সঙ্গত কারণ ও খরচ প্রদান ব্যতিরেকে তা গ্রহণ করবে না; এবং প্রদেয় খরচ সরকারি রাজন্ব হিসাবে নির্ধারিত খাতে জমা হবে।

(৬) আর্জিতে একটি দফায়, পক্ষে কার্যকারক হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, বাদী তা উল্লেখ করবে।

(৭) বাদী কোন মামলায় বিবাদীর সম্পত্তির কোন তফসিল প্রদান করতে অসমর্থ হলে, বাদীর আবেদনক্রমে আদালত বিবাদীকে লিখিত হলফনামা সহকারে তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দাখিল করতে নির্দেশ প্রদান করবে এবং এইরূপ নির্দেশপ্রাপ্ত হলে বিবাদী তদনুসারে তার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির, যদি থাকে, তালিকা লিখিত হলফনামা সহকারে আদালতে পেশ করবে।

(৮) এই ধারার অধীনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দাখিল করার সময়, মোট যত সংখ্যক বিবাদী থাকবেন, আরজি ও সংযুক্ত কাগজাদিরও ততসংখ্যক অনুলিপি আদালতে দাখিল করবে। ●

লেখক সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ

সর্বশেষ হালনাগাদ 3 years আগে

Leave A Reply

Exit mobile version