অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

শেয়ার বাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারের জন্য নতুন টিক সাইজ নির্ধারণ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আগামী ২৯ অক্টোবর ২০২৫ থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে এই নতুন নিয়ম, যেখানে ১ টাকার নিচে মূল্যের শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তনের সীমা বা টিক সাইজ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ পয়সা।

এখন পর্যন্ত সব ধরনের ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের টিক সাইজ ছিল ১০ পয়সা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর এক টাকার নিচে নেমে আসায় পুরোনো নিয়মটি বাজার বাস্তবতার সঙ্গে বেমানান হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে কম মূল্যের শেয়ারগুলোর ক্ষেত্রে দর পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বাজারে মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছিল।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ার ১ টাকার কাছাকাছি অবস্থান করছে এবং অন্তত দুটি কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যে ১ টাকার নিচে নেমে গেছে। ১০ পয়সা টিক সাইজ থাকার কারণে এই শেয়ারগুলো সার্কিট ব্রেকারের সীমায় আটকে গিয়েছিল, ফলে কার্যত লেনদেন বন্ধ হয়ে পড়েছিল।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কোনো শেয়ারের দাম যদি ১ টাকা থেকে ৯০ পয়সায় নেমে আসে, সেটি ১০ শতাংশ দরপতন হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু ৯ পয়সা কমিয়ে অর্ডার দেওয়ার সুযোগ না থাকায় বাজারে স্বাভাবিক দামের সমন্বয় ঘটছিল না। ফলে ক্রয়-বিক্রয়ের পার্থক্য বা বিড-আস্ক স্প্রেড বেড়ে যাচ্ছিল এবং লেনদেনের তারল্য কমে যাচ্ছিল।

এই অচলাবস্থা দূর করতে “Dhaka Stock Exchange Automated Trading Regulations, 1999”-এর ১৮ নং প্রবিধানের অধীনে ডিএসই নতুন এই নিয়ম কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৭, ৮৮ বা ৮৯ পয়সার মতো সূক্ষ্ম দামে অর্ডার দিতে পারবেন। এতে ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান কমবে, বাজারের তারল্য বৃদ্ধি পাবে এবং লেনদেন ব্যয়ও কমে আসবে।

ডিএসই জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে দামের ক্ষুদ্র পরিবর্তন সম্ভব হবে, মূল্য নির্ধারণ আরও বাজারবান্ধব হবে এবং বাজার কাঠামো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

সম্প্রতি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) এবং ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এর শেয়ার ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়ে বাজারে নজির সৃষ্টি করেছে। ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার তাদের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে, যার মধ্যে ৫৫টির দাম ৫ টাকারও নিচে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন টিক সাইজের এই উদ্যোগ লেনদেনের স্থবিরতা ভাঙবে এবং বিনিয়োগকারীদের আবার সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেবে। তবে তারা বলছেন, এই নতুন নিয়ম কার্যকর করতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে তাদের ট্রেডিং সফটওয়্যার ও সিস্টেম আপডেট করতে হবে, যাতে প্রযুক্তিগত কোনো জটিলতা না ঘটে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, এই পরিবর্তন শুধু ক্ষুদ্র মূল্যের শেয়ারের জন্য নয়, বরং পুরো শেয়ার বাজার কাঠামোকে আরও নমনীয়, দক্ষ এবং বিনিয়োগবান্ধব করে তুলবে। এতে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে, দামের বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২৭ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version