অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●

সেপ্টেম্বর মাসে আর্থিক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র চারটিতে, বিপরীতে কমেছে ১৯টিতে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারল্য সংকট, ঋণ পুনর্গঠন এবং বাজারে লেনদেন কমে যাওয়ার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে অপেক্ষাকৃত সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে বিডি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, মাইডাস ফাইন্যান্স ও প্রিমিয়ার লিজিং-এ। বিডি ফাইন্যান্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৭টি এবং পরিশোধিত মূলধন ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আগস্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৫.৮৯%, যা সেপ্টেম্বর মাসে ১.৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.৬৯%-এ। বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ১৮.৮৯% এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৩.৪২% শেয়ার।

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের শেয়ার সংখ্যা ৪৩ কোটি ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪০৯টি এবং পরিশোধিত মূলধন ৪৩৬ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আগস্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৭.৭১%, যা সেপ্টেম্বর মাসে বেড়ে ২৮.২৬%-এ দাঁড়ায়। বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৫৬.৬৬%, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.১১% এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩.৯৭% শেয়ার।

মাইডাস ফাইন্যান্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭টি এবং পরিশোধিত মূলধন ১৪৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আগস্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৬.৩২%, যা সামান্য বেড়ে সেপ্টেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ২৬.৩৬%-এ। বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩৮.৩৬%, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.৪২% এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৪.৮৬% শেয়ার।

প্রিমিয়ার লিজিংয়ের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার ২১০টি এবং পরিশোধিত মূলধন ১৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগস্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২২.৭৯%, যা সেপ্টেম্বর মাসে ০.১৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.৯৭%-এ। উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২০.৭২% এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৬.৩১% শেয়ার।

অন্যদিকে ১৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেপ্টেম্বর মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে আগস্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৫.৬৮%, যা সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৬৯%-এ। ডিবিএইচ ফাইন্যান্সে ২৯.০৪% থেকে কমে ২৮.৯৩%-এ নেমেছে। ফারইস্ট ফাইন্যান্সে ১৫.৬৫% থেকে কমে ১২.৮১%-এ এসেছে, যা খাতে অন্যতম বড় পতন।

এফএএস ফাইন্যান্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ৯.৭৩% থেকে কমে ৮.৩৯%-এ নেমেছে। ফার্স্ট ফাইন্যান্সে সামান্য কমে ২০.৫৭% থেকে ২০.৩২%-এ এসেছে। জিএসপি ফাইন্যান্সে ৩৭.৯৪% থেকে কমে ৩৬.৬৮%-এ নেমেছে। আইসিবিতে (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ১.৫৯% থেকে ১.৫৬%-এ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে ২২.৫৬% থেকে ২১.৯২%-এ এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্সে ২০.৯৯% থেকে কমে ১৯.৭২%-এ নেমেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।

ইসলামিক ফাইন্যান্সে ২৩.৩৬% থেকে কমে ২৩.২১%-এ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সে ২৩.২৬% থেকে নেমে এসেছে ২২.৮৩%-এ, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্সে ১৪.৭৭% থেকে কমে ১৪.৭২%-এ এবং ফনিক্স ফাইন্যান্সে ১৯.৮৫% থেকে নেমে এসেছে ১৯.১৯%-এ। পিপলস লিজিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আগস্টে ৯.৩৯% থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৯%-এ। প্রাইম ফাইন্যান্সে ৭.৫৪% থেকে কমে ৭.২৬%-এ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালে ১৯.৩৪% থেকে কমে ১৮.৩৮%-এ এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্সে ১৪.৯৮% থেকে কমে ১৪.২২%-এ নেমেছে। উত্তরা ফাইন্যান্সে সামান্য কমে ৩২.৫০% থেকে ৩২.৪১%-এ দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আর্থিক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমার পেছনে বেশ কিছু কাঠামোগত কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঋণখেলাপির উচ্চ হার, লিজিং ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দুরবস্থা, এবং সামগ্রিকভাবে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা।

অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বেড়েছে, সেখানে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল আয়, নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও শাসনব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, পাশাপাশি দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২৬ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 5 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version