অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, শ্রেণিকৃত ঋণ বৃদ্ধি এবং মুনাফা বিকৃতি—এই তিনজনিত চাপে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে কর্মীদের উৎসাহ বোনাস প্রদানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা ব্যাংকগুলোকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে বা আর্থিক দুর্বলতা আড়াল করে আর বোনাস দেওয়া যাবে না। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদার হবে এবং নির্বাহী সিদ্ধান্তগুলো আরও সতর্ক ও জবাবদিহিমূলক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক প্রকৃত আয়-ব্যয় বিবেচনায় অর্জিত নিট মুনাফার ভিত্তিতেই বোনাস দিতে পারবে। অর্থাৎ শুধু হিসাবের খাতায় লাভ দেখানো চলবে না—নগদ প্রবাহ, আয়ের গুণগত মান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে বাস্তব অগ্রগতি থাকতে হবে। পুঞ্জীভূত মুনাফা, যা অতীত বছরের সঞ্চিত লাভ, সেখান থেকেও বোনাস দেওয়া যাবে না—যা অতীতে বেশ কিছু ব্যাংক নিয়মিত করত।

এ ছাড়া মূলধন ঘাটতি, নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনে ঘাটতি, কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া বিলম্বিত ছাড় সুবিধা থাকলে—সে ব্যাংকের বোনাস বন্ধ থাকবে। এই তিনটি শর্ত বাস্তবে অনেক ব্যাংককেই সরাসরি অযোগ্য করে দেবে; কারণ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বড় অংশই এখনও পুঁজিঘাটতি বা প্রভিশন ঘাটতির বোঝা বহন করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত হয়েছে—শ্রেণিকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকলে বোনাস নিষিদ্ধ। অর্থাৎ ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় প্রকৃত উন্নতি না ঘটলে ব্যাংকগুলো আর কর্মীদের পুরস্কৃত করতে পারবে না। এটি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনাকে অনুপ্রাণিত করবে খেলাপি ঋণ কমানো এবং বাস্তব পুনরুদ্ধারে মনোযোগ দিতে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে আলাদা করে ২০২৫ সালের নির্দেশিকা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, কারণ এসব ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ খেলাপি, মূলধন ঘাটতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে গভীর ঝুঁকিতে রয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এ নির্দেশনা কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোর একটি বড় অংশ বোনাস দিতে পারবে না। বর্তমানে অনেক ব্যাংক বছর শেষে নানা ছাড় সুবিধা নিয়ে বা হিসাব সাজিয়ে বোনাস দেয়—যা এখন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে স্বল্পমেয়াদি অসন্তোষ তৈরি হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটা ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সামগ্রিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা বাড়ানো, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা এবং কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে পুরস্কার দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করা—এই তিনটি উদ্দেশ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 7 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version