অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের খালাস কার্যক্রম সর্বনিম্ন পর্যায়ে। পাশাপাশি দুইদিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরের গুডস ইয়ার্ডে কনটেইনার জটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চট্টগ্রাম থেকে কনটেইনার সংগ্রহের অনুমতি দিলেও বিরূপ পরিস্থিতির কারণে তাতে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সাড়া নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০ আগস্ট মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে এসব জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষত ফেনীর অবস্থা সবচেয়ে বিপর্যস্ত। এ জেলার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি বড় অংশ থাকায় সরাসরি যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ফেনীর লালপোল এলাকার মহাসড়কে প্রায় বুকসমান পানি প্রবাহিত হওয়ায় উভয় মুখে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যেতে পারছে না কোনো যানবাহন। আবার রফতানিমুখী পণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশও করতে পারছে না। পণ্যবাহী অনেক ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ফেনীর উভয় প্রান্তে আটকে থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটও দেখা দিয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে ১৮-৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ছিল ট্রেন যোগাযোগ। পরে অর্থনীতি ও দেশের স্বার্থে পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ১ আগস্ট থেকে শুধু কনটেইনার ট্রেন পরিচালনা শুরু করে রেলওয়ে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। কিন্তু ২ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৪৬ টিইইউএস। যার মধ্যে ২০ ফুটের ওভারওয়েট কনটেইনারের সংখ্যাই ছিল বেশি। ওই সময়ে বন্দরের বহির্নোঙরে আরো ৫০০ টিইইউএস আইসিডি কনটেইনারবাহী জাহাজ বার্থিংয়ের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু চালু করার ২০ দিনের মধ্যে ফের কনটেইনার ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আইসিডি ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বর্ষাকালে বন্দরের বহির্নোঙরে খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ থাকে। তাছাড়া ট্রেন বন্ধ থাকার পাশাপাশি বন্যার কারণে সড়কপথে পণ্য নিয়ে যাওয়ার সুযোগও কম। যার কারণে বন্দরের খালাস কার্যক্রম কিছুটা স্থবির। তবে বন্যা পরিস্থিতিজনিত সংকট মোকাবেলায় এনবিআর ২২ আগস্ট কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনার চট্টগ্রাম থেকে খালাসের অনুমতি দিয়েছে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলে চট্টগ্রাম বন্দরের খালাস কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দেশের আমদানি-রফতানি পণ্যের (কনটেইনার) ৯৫ শতাংশই পরিবহন করা হয় সড়কপথে। বাকি ৪ শতাংশ রেলপথে এবং মাত্র ১ শতাংশ অন্যান্য মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।
বন্যার কারণে ২২ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে যেতে পারছেন না অনেকে। গতকাল স্বাভাবিক নিয়মে খালাস কার্যক্রম কম থাকলেও শুধু পচনশীল ও নিত্যপণ্য খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (ফ্রেইট) মো. কামাল আখতার হোসেন বলেন, ‘বিরূপ পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে ১৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ জমে ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চালানোর মাধ্যমে বন্দরে জমে থাকা কনটেইনারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। তবে গত ২২ আগস্ট থেকে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উভয় মুখে কনটেইনারের জট ফের বাড়বে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এর জেরে সরকার পতনের কারণে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ভাটা পড়েছিল। নতুন করে কার্যক্রম শুরু হলেও বন্যা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা আবারো সংকটের মধ্যে পড়েছেন। চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পণ্য সংগ্রহ ও রফতানিমুখী জাহাজে পৌঁছাতে না পারলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।
রেলওয়েসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত বন্যাকালে সড়কপথ বন্ধ হলেও রেলপথ চালু থাকে। কিন্তু এবার ফেনী ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। যে কারণে সড়কপথের পাশাপাশি ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। ফেনীসহ কয়েকটি এলাকায় রেললাইন পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ২২ আগস্ট সকাল থেকে ট্রেন চলাচল চালু করে দেয়া হয়। এতে পোর্ট ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
অকা/শিবা/ফর/সকাল/২৪ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

