অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
জার্মানিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে ধস নেমেছে। অথচ ইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার ছিল জার্মানি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বলছে, আগের অর্থ বছরের ১১ মাসের (২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই-মে) তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এই ১১ মাসে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এতে কিছুটা উদ্বিগ্ন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। কারণ জার্মানির পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাক রফতানি পরিস্থিতি ভালো নয়। এমনকি ভারতেও পোশাক রফতানি কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাপে আছে। এ কারণে দেশটি এখন আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক রফতানিতে। দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হলে আমাদের পোশাক রফতানিও বাড়বে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপীয় জোটভুক্ত দেশগুলোতে গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তৈরি পোশাকের বাজার সংকুচিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোতে তৈরি পোশাক আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব ল করা গেছে।
মহিউদ্দিন রুবেল উদ্বিগ্ন হওয়ার একটা কারণ উল্লেখ করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে আমরা লোহিত সাগর ব্যবহার করতে পারছি না, যার কারণে লিড টাইম বেড়েছে। অর্থাৎ রফতানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির অন্যতম প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দেশ থেকে যে পরিমাণ পোশাক রফতানি হয় তার প্রায় ৫০ শতাংশই যায় ওই অঞ্চলে। সম্প্রতি বিশ্ব বাজার থেকে পোশাক আমদানি কমিয়েছে ইইউ। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের বাজারেও।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, শুধু জার্মানি নয়, চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসের হিসাব বলছে ইতালিতেও বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, ভারতে কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান বাজার মন্দার কারণে ক্রেতারা আমাদের এখানে অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু ইউরোপ নয়, সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রফতানিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে পোশাক রফতানি ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রফতানি হয়েছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মে মাসে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দণি কোরিয়ায় রফতানি যথাক্রমে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মে এই ১২ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রফতানি হয়েছে ২১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এই ১১ মাসে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি যথাক্রমে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট পণ্য রফতানির ৮৫ শতাংশ আয় তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এ সময় ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এই রফতানি গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ১১ মাসে নিট পণ্য (সোয়েটার, টি-শার্ট) রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের। এেেত্র প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক (শার্ট, প্যান্ট) রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৯১৪ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কম।
এদিকে ইইউ’র পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়েছে ইইউ। ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে ইইউ’র দেশগুলো পোশাক আমদানি করে ৭১৩ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৫ ইউএস ডলারের, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে হয় ৬৪৩ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫০ ইউএস ডলার। ●
অকা/পোশি/ফর/রাত/২৬ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে
